“মা আছাবা মিম মুসিবত ইল্লা বেজনিল্লাহ ওয়া মান ইউও মেন্ বিল্লাহে ইয়াহদে কালবাহু ওয়া আল্লাহু বেকুল্লে শাইয়িন আলীম। অর্থ: আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে কোন বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত (আয়াত ১১: সূরা তাগাবুন)।” ৪টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে: ১) আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোনো বিপদ আসে না, ২) আল্লাহর একত্ববাদে পরিপূর্ণ বিশ্বাস ৩) সৎ পথে পরিচালিত হওয়া, এবং ৪) প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল বিষয়েই আল্লাহতায়ালা অবগত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে প্রথম ‘করোনা ভাইরাস’ সংক্রমণ শুরু হয় আর ২০২০ এর ১১ জানুয়ারি উহানেই করোনা আক্রান্ত ১ম ব্যক্তি মারা যায়। তখন থেকে ‘করোনা’ ভাইরাস (কোভিড -১৯) বিশ্বব্যাপী বিধ্বংসীরূপে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ১৩ এপ্রিল ২০২০-এ ২১০ টি দেশ ও অঞ্চলে মোট ১৮,৫৩,১৫৫ মানুষ সংক্রামিত হয়েছে ও মারা গেছে ১,১৪,২৪৭। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা গাণিতিক হারে বেড়েই চলেছে। কোনো ঔষধ ও প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হওয়ায় মানবজাতি দিশেহারা। মানুষের সকল শক্তিই কার্যতঃ ব্যর্থ হয়ে গেছে। এভাবে চললে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পুরো মানবজাতি। আশ্চর্য্যের বিষয় হলো আধুনিক সভ্যতা ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আঙ্গিকে বিশ্বসেরা দেশগুলোতেই করোনার প্রভাব পিছিয়ে থাকা দেশগুলো থেকে ‘বহুগুন’ বেশি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক আঙ্গিকে বিশ্বের ‘শ্রেষ্ঠ শক্তি’ আমেরিকাতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে সর্বাধিক ৫,৬০,০০০ যা সারা বিশ্বের ৩০.২৪%, আর মারা গেছে ২২,১১৫ যা পৃথিবীর সর্বমোট মৃত্যুর ১৯.৩৬%। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর শক্তিশালী দেশগুলোর অবস্থাও একইরকম – যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, জার্মানি ইত্যাদি। ‘আমেরিকা’ ও ‘মার্কিন’ নেতৃত্বাধীন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোতে ১৩ এপ্রিল ২০ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৩,৪১,৪৫৬, যা সারা পৃথিবীর ৭২.৩৯% এবং জীবনহানী ৯৭,৩৯৪ যা মোট মৃত্যুর ৮৫%। অন্যদিকে, সিরিয়াতে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ ও মৃত্যু মাত্র ২ জন, লিবিয়াতে আক্রান্ত মোট ২৫ আর মারা গেছে মাত্র ১ জন, আর ইয়েমেনে আক্রান্ত মাত্র ১ জন। আমেরিকার শেতাঙ্গ, দাম্ভিক, ও অহংকারী রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দেশগুলোকে ‘ঘৃণাভরে’ ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে ‘SHITHOLE’ কান্ট্রি হিসেবে ‘উপহাস’ করেছিলেন তাদের ক্ষতির পরিমানও সামান্যই: ১) হাইতি: আক্রান্ত – ৩৩, মৃত্যু – ৩) এল সালভাদোর: আক্রান্ত – ১২৫, মৃত্যু – ৬, ৩) আফ্রিকা’র দেশগুলোর অবস্থাও বেশ ভালো। অস্বাভাবিক কোনো মৃত্যুই ‘মানুষ’ হিসেবে আমাদের কাম্য নয়। তারপরও আলোচনার ক্ষেত্রে বলবো, “আমেরিকানদের অকল্পনীয় ও অসহনীয় এ মৃত্যুর জন্যে মুসলিমরা কোনোভাবেই দায়ী নন।” যদিও রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প আমেরিকার ‘একমাত্র সমস্যা’ হিসেবে বিপদগ্রস্থ ‘মুসলিম’ ধর্মাবলম্বীদেরকেই চিহ্নিত করেছেন, মসজিদগুলি পর্যবেক্ষণ, ও মুসলমানদের ‘অনুসরণ’ করতে একটি ডাটাবেস প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। মুসলমানদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। মুসলিমদেরকে বিব্রত করে ইস্রায়েলের রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং ১৪ ই মে, ২০১৮-এ ‘মার্কিন দূতাবাস’ আনুষ্ঠানিকভাবে জেরুজালেমে স্থানান্তর করেছেন। সন্ত্রাসবাদের নামে আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ‘শিশু’ ও ‘নারী’ সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করে মানবতাকে ধ্বংস করা হয়েছে। গুয়ানতানামো বে-তে ২০০২ সালে পবিত্র কোরআন শরীফকে ‘অবমাননা’ করা হয়েছে। আধুনিক সভ্যতার নামে আমেরিকাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে সমলিঙ্গের বিয়েকে প্রাতিষ্ঠানিক করা হয়েছে যা আল্লাহ কর্তৃক কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। একই কারণে কোরআন শরীফে লুথ (আ:) এর সময়ে পুরো জাতিকে ধ্বংসের কাহিনীও বর্ণিত হয়েছে (সুরাঃ আল আ ‘রাফ ৮০-৮৪)। শয়তানের প্ররোচনায় হীন স্বার্থ রক্ষার কারণে সকল ধরণের ‘সামাজিক’ ও ‘মানবিক’ মূল্যবোধ কবরস্থ হয়ে গেছে। ইসলাম ধর্মকে স্তব্ধ করার জন্যে বিশ্বের একশ্রেণীর নেতৃত্ব সম্ভবত: সবকিছু করলেও বিশ্ব মুসলিম নেতৃত্ব হীনস্বার্থের জন্যে ‘চুপ’ থেকেছে বা ‘মৌন’ সমর্থন দিয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফ মহান আল্লাহতায়ালা কর্তৃক পুরো মানবজাতির জন্যে প্রেরিত হয়েছে। এ ধর্মগ্রন্থে সহজ, সরল ও সৎ পথের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আল্লাহতায়ালার একত্ববাদের কথা বলা হয়েছে, দুনিয়া ও আখিরাতে মানুষের কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। মজার বিষয় হলো যে পবিত্র কোরআন শরীফ রক্ষার দায়িত্ব মহান আল্লাহতায়ালা নিজেই গ্রহণ করেছেন। “ইউরিদুনা লিউথফিউ নূরাল্লাহি বেয়াফওয়া হিহিম ওয়া আল্লাহু মুতিম্মু নুরিহী ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন। অর্থ: তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে (সুরা সাফ, আয়াত ৮)।” আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব, অহংকার, হিংসা, সমকামিতা, অবৈধ যৌণ মিলন, দুর্নীতি, অত্যাচার, ও অবিচারের ক্ষেত্রে মানবজাতি সীমা লঙ্ঘন করেছে আর কোরআন শরীফে সীমালংঘনকারীদের জন্যে ভয়ানক ‘শাস্তির’ উল্লেখ আছে। হয়তো আল্লাহতায়ালা করোনা’র মাধ্যমে মানবজাতিকে অতীতের মতোই ‘চরম’ শাস্তি প্রদান করছেন। তিনি চাইলে আমাদেরকে ধ্বংস করে ‘নুতন’ জাতি সৃষ্টি করতে পারেন বা কেয়ামত সংগঠিত করতে পারেন। মানবজাতিকে বিশেষত: মার্কিন ও পশ্চিমা নেতৃবৃন্দকে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে একান্তে ‘অনুশোচনা’ ও ‘ক্ষমা’ প্রার্থনা করার এটাই সর্বোত্তম সময়। আমরা যদি আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে একমাত্র তারই উপাসনা করি ও তারই নির্দেশিত সহজ ও সরল পথে পরিচালিত হবার ‘প্রতিজ্ঞা’ ব্যক্ত করি তাহলে হয়তো তিনি মানবজাতিকে ক্ষমা করবেন ও করোনা থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশক্তিমান, মহাজ্ঞানী, পরম করুনাময়, সর্বোত্তম বিচারক, ক্ষমা ও দয়াশীল!
লেখক ও কলামিষ্ট ; মো: সামসুল আলম চৌধুরী (.এমবিএ)
Leave a Reply