বিভাগীয় প্রতিবেদক: সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে উপসর্গের রোগীর সংখ্যাও। আর এসব রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে স্থাপিত পলিমার চেইন রি-অ্যাকশন (পিসিআর) ল্যাবে। নমুনা আসার হারও বেড়েছে। যে কারণে হিমশিম খাচ্ছে ল্যাবের সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট বিভাগের চার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দিনে প্রায় ২৫০ নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে আসলেও প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জনের রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালে নমুনা প্রস্তুতের ক্ষমতা সীমিত হওয়া এবং লোকবল সঙ্কটের কারণে চাইলেও অধিক পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। নমুনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সময়মতো রিপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে না।
এ চাপ মোকাবিলায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিসিআর ল্যাব দ্রুত চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। মঙ্গলবার তিনি সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টার পরিদর্শনে এসে এই নির্দেশ দেন। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা পর্যায়ের চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের সিলেট জেলার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
সিলেট অঞ্চলে করোনাভাইরাস শনাক্তে চলতি মাসের ৭ তারিখে পিসিআর ল্যাব চালু হয়। ওসমানী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের একটি কক্ষে স্থাপিত ল্যাবে প্রথম দিনে ১১৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য এসেছে। এরমধ্যে প্রায় ২ হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ১ হাজার নমুনা। ফলে রিপোর্ট প্রদানেও বিলম্ব হচ্ছে। চিকিৎসা পেতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন রোগীরা।
চাপ কমাতে সিলেট থেকে প্রায় ৬৩১ নমুনা মঙ্গলবার ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকেও সরাসরি আইইডিসিআরে কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার দুইজনের পজিটিভ ফলাফল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে এসেছ। আর সম্প্রতি হবিগঞ্জের ২০ জনের করোনার পজিটিভ ফলাফল ঢাকা থেকে আসে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও ল্যাব প্রধান অধ্যাপক ডা. ময়নুল হক জানান, এই পিসিআর ল্যাবে ক্যাপাসিটি অনুসারে প্রতি পর্বে ৯৪টি করে পরীক্ষা সম্ভব। প্রতিদিন দুই পর্বে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। হঠাৎ করে নমুনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ল্যাবে মারাত্মক চাপ পড়েছে। আবার প্রতিপর্বেই ৫-১০টি নমুনার রিপোর্টে ভ্রান্তি আসে; তখন সেই নমুনাগুলো আবার পরীক্ষা করতে হয়। এ কারণে সময় বেশি লাগছে বলে জানান তিনি।
চাপ কমাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ল্যাব দ্রুত চালু করা দরকার বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে ল্যাব চালু হলে প্রতিদিন অন্তত ১০০ নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। এতে এই ল্যাবের চাপ কমবে।
এ বিষয়ে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শাবির ল্যাবে পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। ল্যাবের দায়িত্বে সংশ্লিষ্টরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, বর্তমানে ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে প্রতিদিন আড়াইশতটির মতো নমুনা পরীক্ষার জন্য আসছে। ল্যাবে একদিনে সর্বোচ্চ ১৮৮টি পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু প্রতিদিন তা সম্ভব নয়। যে কারণে নমুনা জমা হয়ে আছে, রিপোর্ট দিতেও দেরি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১০৬ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন সিলেটের প্রথম রোগী ডা. মঈন উদ্দিনসহ তিনজন।
Leave a Reply