লাল সবুজের দেশ প্রতিবেদক : করোনায় শহরের আর সবার মতো বড় অসহায় হয়ে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষগুলো। হাতে পেতে যাদের জীবন চলে, তারা এখন কোথায় যাবে? পথে লোক নেই খুব। দোকানপাটও আগের মতো খোলা নেই। যেটুকু আছে, নেহাত প্রয়োজনে। সবাই কেমন দূরে দূরে। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র পথ যে এখন দূরেই থাকা!
নিয়ম তো আর পথে বসতি গড়া মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে না! আর সব দিনের মতো তাদেরও ক্ষুধা পায়। খেতেও হয়। তাদের কথা ভেবেই করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে নীরবে অসহায়দের খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তিনি (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) র্যাব-২ এর অধিনায়ক। ব্যক্তিগত উদ্যোগের বাইরে ব্যাটালিয়নের প্রতিটি ইউনিট তরফেও বিতরণ হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী।
ছিন্নমূল এসব মানুষের হয়তো ঈদ বলতে আলাদা কিছু নেই। কিন্তু তারপরও তাদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এগিয়ে এলেন র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ। রবিবার দুপুরে তার নেতৃত্বে পাঁচশোর বেশি ছিন্নমূল মানুষকে ‘ঈদ উপহার’ দিয়েছে র্যাব । এতে ছিল চাল, ডাল, আলু, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। এসময় ছিলেন ব্যাটালিয়নের অন্য কর্মকর্তারাও।
র্যাব-২ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শের-ই-বাংলা নগর, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট থানা, কলাবাগান ও হাজারীবাগ থানা এলাকায় ছিন্নমুল মানুষের মধ্যে কদিন পর পরই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে তারা। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই সহায়তা পেয়েছেন।
শুধু প্রকাশ্যেই নয়, রাতের অন্ধকারেও বাড়ির দুয়ারে খাদ্য সামগ্রী রেখে আসছেন র্যাব এর সদস্যরা। যাদের একটি দল খাবার রেখে আসে। অন্য একটি দল দরজা কড়া নেড়ে জানিয়ে দেয়, দুয়ারে খাবার আছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অনন্য এই নজির রাখছে এলিট ফোর্সটির সদস্যরা।
র্যাব জানায়, মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ, সাতমসজিদ রোড ও আগারগাঁও ক্যাম্প থেকে প্রতিদিনই অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এতে র্যাবের বাইরে সাধারণ নাগরিকদের অনেকে এগিয়ে এসেছেন। তারাও নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় হাত ধোয়া কর্মসূচি, হ্যান্ডসেনিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেছে র্যাব।
র্যাব-২ এর প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকে দীর্ঘদিন কর্মহীন। চক্ষুলজ্জায় মানুষের কাছে হাত পাততে পারেন না তারা। বাধ্য হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে। আমাদের লক্ষ্য তারাই। খুঁজে খুঁজে তাদের দুয়ারে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।’
তিনি জানান, এর বাইরে ঢাকার ফুটপাতে, বস্তিতে ভাসমান মানুষদেরও খাবার দিচ্ছেন তারা।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদকনির্মূল ছাড়াও সাধারণ মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়িয়েছে। কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই নয়, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোও আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ বলে মনে করি।’ এর বাইরে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজারে নজরদারি চালানো, নিরাপত্তা চৌকিতে যানবাহন তল্লাশিসহ জনসচেতনতায় বাহিনীটি সব ধরনের কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply