এম আর ওয়াসিম, ভৈরব(কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
লিবিয়ায় দুষ্কৃতকারী ও পাচারকারী চক্রের গুলিতে ভৈরবের ৯ জন গুলিবিদ্ধ হলে ৬ জনের মৃত্যু ঘটে এবং ৩ জন আহত হয়। লিবিয়ার ত্রিপলীতে জিনতান হাসপাতালে আহত ৩ জনের চিকিৎসা চলছে বলে জানা যায়। গত ২৭ মে ঘটনাটি ঘটেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়।
নিহতের পরিবারবর্গ জানায় প্রায় ১ বছর আগে থেকে তারা লিবিয়া গিয়ে বেনগাজী শহরে কাজ করে চলছিল। কিন্তু ভৈরবের শ্রীনগর ইউনিয়নের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে তানজিরুল দালাল লিবিয়ায় (বসবাসরত) তাদেরকে ফুসলিয়ে সাগর পথে সহজে ইটালি পাঠাতে পারবে বলে রাজী করায়। সেই উদ্দেশ্যে বেনগাজী থেকে ত্রিপলী যাওয়ার পথে গত ২০শে মে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গাজীপুর, কুমিল্লা, ও নোয়াখালীর একটি দালাল চক্র লিবিয়ান ও ভিনদেশী নাগরিকের একটি মাফিয়া চক্রের সাথে আতাত করে তাদের কে কিডনাপ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। একজন বাঙ্গালীকে দিয়ে বার বার ফোন করানো হয় মুক্তিপনের টাকা পরিশোধ করার জন্য। অন্যথায় তাদেরকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয়। এর মধ্যে তাদেরকে প্রতিদিনই শাররীক ও মানসিক নির্যাতন করে তাদেরকে দিয়ে পরিবারের নিকট ফোন করিয়ে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হত। কিন্তু করোনার এই মহামারীতে টাকার যোগান দিতে না তাদেরকে হত্যা করে এই দালাল চক্র।
এদিকে দালাল তানজিরুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন নিহত সাকিব আল হাসানের পরিবার। সাকিবের বাহারুল বলেন ৩৮ জন বাংলাদেশিকে মিজদাহ শহরের কাছে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনীর একদল দুষ্কৃতকারী তাদরকে কিডনাপ করে নিয়ে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। মুক্তিপণের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমার ছেলে সাকিব কে সহ হত্যা করা হয়।
কয়েকটি আন্তর্জাতিক মাধ্যমে জানা যায় মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে জিম্মিকারী অমানবিক নির্যাতন চালালে একপর্যায়ে অপহৃত ব্যক্তিরা মূল অপহরণকারী লিবিয়ানকে হত্যা করেন। এর প্রতিশোধ নিতে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে যাতে আনুমানিক ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয় এবং আরও ১১ জন বাংলাদেশি হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়।
নিহতরা হলেন শ্রীনগর ইউনিয়নের বাহারুল আলম বাচ্চুর পুত্র সাকিব, সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুরের হাজী মেহের আলীর পুত্র আকাশ উরফে সাদ্দাম, কালিকাপ্রসাদ আকবর নগরের জিন্নাত আলীর পুত্র মাহবুবুর রহমান, ভৈরব বাজার ঘষি পট্টির অধির চন্দ্র দাসের পুত্র রাজন দাস, শম্ভুপুরের মকসুদ মিয়ার পুত্র মোঃ আলী, ও শম্ভুপুরের মামুন মিয়া।
উল্লেখ্য যে পরবর্তীতে মাহবুবুর রহমানের পরিবার জানায় তার মৃত্যুর খবরটি তারা নিশ্চিত নয়।অন্যদিকে মামুন ও শাকিল নামে দুজনের সঠিক পরিচয় মিলছে না।
আহতরা হলেন – পৌর এলাকার জগ্নাৎপুরের সাফিল উদ্দিনের পুত্র সজল মিয়া, শম্ভুপুরের সাত্তার মিয়ার ছেলে জানু মিয়া, সাদেকপুরের মৌটুপী গ্রামের আঃ আলীর পুত্র সোহাগ আহমেদ।
নিহত ও আহতদের পরিবারবর্গ মাননীয় সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান যে তাদের দেহ যেন দেশের মাটিতে এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এবিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহিন বলেন লিবিয়ায় গত ২৭মে দিবাগত রাতে ২৬ বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুষ্কৃতিকারীরা । এখন পর্যন্ত শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ভৈরবের সর্বমোট কতজন নিহত এবং আহত হয়েছে। তবে, প্রাথমিক তথ্য মতে জানাগেছে- ভৈরবের ৪ থেকে ৫জন যুবক নিহত এবং ৩জন আহত হয়েছে। গতকাল থেকে আমরা কাজ করছি আজ দিন শেষে আশা করছি সঠিক তথ্য জানা যাবে। এ বিষয়ে ভৈরব থানা পুলিশ মাঠ কাজ করছে।
Leave a Reply