এম আর ওয়াসিম, ভৈরব(কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
লিবিয়ায় মিজদা শহরে নৃশংস হত্যাকান্ডে ২৬ বাংলাদেশী নিহত এবং ১১ বাংলাদেশী মারাত্মক ভাবে আহত হয়। এসময় ভৈরবের ৬ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত চক্রের ৩ মানব পাচারকারী গ্রেফতার ও ১ জনকে সন্দেহ জনক ভাবে আটক করে র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্প।
নিহতরা হলেন মোহাম্মদ আলী (২৫), মাহবুবুর রহমান (২১), রাজন চন্দ্র দাস (২৭), সাকিব মিয়া (১৮), সাদ্দাম হোসেন আকাশ (২৫), ও শাকিল (২০)। আহতরা হলেন সৌরভ আহমেদ সোহাগ (২২), মোহাম্মদ সজল মিয়া (২০) ও মোঃ জানু মিয়া।
ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করতে নিজে ও সংসারের দায় মাথায় নিয়ে টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্যে অনেকেই বিদেশে পাড়ি দেয়। বিদেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। তাদের কষ্টার্জিত আয় এদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই সুযোগে বাংলাদেশের এক শ্রেনীর অসাধু দালাল চক্র স্বল্প আয়ের মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগসাজসে বিদেশে প্রেরণ করে। শুধু প্রেরণ করেই ক্ষ্যান্ত হয় না এই দালাল চক্র। সেখানে নিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য তৈরী করা হয় নানা প্রকার ফন্দি ও কলা কৌশল। চতুর্মুখী ফন্দিতে ফেলে তাদের কে জিম্মি করে রাখা হয়। জিম্মি করে টাকা আদায় করেও দালাল চক্রের টাকার লালসা শেষ হয় না। পরিশেষে তাদের কে মাফিয়া চক্রের নিকট বিক্রি করে সীমান্ত পারাপারের জন্য। সেখানেও থাকে দালালদের দালালী। এই সব দালাল চক্র জিম্মি করে যাত্রীদের কে পদে পদে টাকার জন্য নির্মম ভাবে শাররীক ও মানসিক নির্যাতন চালায় করে। টাকা দিতে না পারলে হত্যা করা হয় ।সম্প্রতি সময়ে গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদা শহরে এমনিই একটি নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় প্রায় অর্ধশত বাঙ্গালীর উপর গুলিবর্ষণ করে। এতে ২৬ জন নিহত ও ১১জন আহত হয়। উক্ত ঘটনায় দালাল চক্রের ৪জনকে আটক করে র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্প।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিছু অসাধু দালালের মাধ্যমে উপরোক্ত ব্যক্তিরা লিবিয়া যায়। পরে দালালদের দালালদের প্রতারণার ফাদে পরে হামলার শিকার হয়। এই বর্বরোচিত ঘটনার মূল উদ্ঘাটন করতে গিয়ে দেয়ে দেখা যায় যে, অবৈধ ভাবে ইউরোপ যাওয়ার জন্য দালাল চক্র মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নৌ ও মরুপথে বাংলাদেশীদের পাঠিয়ে আসছে। এই অবৈধ অভিবাসীদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে জিম্মি করে প্রতিনিয়ত মুক্তিপণ দাবী এবং শাররীক নির্যাতন করে আসছে। উল্লেখিত প্রানহানীর ঘটনায় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উল্লেখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারীতে অভিযান চালিয়ে ভৈরবের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩ দালাল ও ১ জন কে সন্দেহ জনক হিসেবে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুরের মৃত আহাদ মিয়ার ছেলে হেলাল উদ্দিন(৪৫), পৌর এলাকার জগ্নাৎপুর তাতার কান্দি গ্রামের মৃত আঃ রশিদ মিয়ার ছেলে খবির উদ্দিন(৪২), জগ্ননাথপুর লক্ষীপুরের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে শহীদ মিয়া(৬১), ও শম্ভুপুরের জাফর মিয়ার স্ত্রী মুন্নি আক্তার রুপসি(২৫)।
উক্ত ঘটনায় র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ এর কমান্ডিং অফিসার লেঃ কমান্ডার মোঃ ইফতেখার উদ্দিন বলেন লিবিয়ায় গুলিতে বাংলাদেশীের নিহত ও আহতের ঘটনায় দালাল চক্রদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে দালাল চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আজ ভৈরবেও ৪ জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। লিবিয়ায় গুলি করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় দেশে ও বিদেশে সম্পৃক্ত দালালচক্রের কোন সদস্যই রেহাই পাবে না। লিবিয়াতেও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে অপরাধীদের কে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাছাড়া এঘটনার মূল হোতাকে লিবিয়ায় ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে চিহ্নিত করে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply