ক্রাইম নিউজ ঃ (সংগৃহিত) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে শাহবাগ থানায় ঢুকলাম,ওসির রুমে বসে আছি,একটি ক্লাস নাইনে পড়া মেয়ে সাথে তার আপন বড়ো ভাইসহ দেখা করতে চায় আমার সাথে।
ভিতরে আসার পর মেয়েটি শুধু কান্নাকাটি করলো প্রায় ১০ মিনিট, সে কিছুই বলতে পারছেনা অধিক কান্নাকাটি করার জন্য।তাকে একটু স্বাভাবিক হয়ে কথা বলার অনুরোধ করলাম।
এবার সে বলা শুরু করলো ফুপিয়ে কাদতে কাদতে,পুরাটা সময়ই সে কেদেছে যতক্ষন কথা বলেছে;
এসেছিলো খালাতো বোনের বাসায় নিজের চিকিৎসা করানোর জন্য,খালাতো বোনের ০২ সন্তানসহ সুখের সংসার,খালাতো দুলাভাই সরকারি চাকরি করেন।২/১ দিন যেতে না যেতেই দুলাভাই এর নজর পড়লো শ্যালিকার দিকে,বিভিন্নভাবে পটানোর আপ্রান চেষ্টা,যখনি খালাত বোন বাচ্চাদের আনতে স্কুলে যায়,তখনি দুলাভাই হাজির এবং মেয়েটিকে ফিজিক্যাল হ্যারাজমেন্টের চেষ্টা(উল্লেখ্য তখনো স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি)।
মেয়েটি থাকে গ্রামে,দেখতে ফুটফুটে সুন্দর এবং ভদ্র,সে লজ্জায় না পারছে খালাত বোনের সাথে শেয়ার করতে,না পারছে নিজের ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে(তার কোন মোবাইল নেই),আবার সহ্য ও করতে পারছেনা।সে নিজেকে যেভাবেই হোক এই পিশাচের হাত থেকে নিরাপদ রেখেছে বেশ কিছুদিন।
কিন্তু পিশাচ দুলাভাই তো পিছু ছাড়েনা,শুধু সুযোগ খোজে কিভাবে মেয়েটির সর্বনাশ করা যায়।
অবশেষে মেয়েটি তার বোনকে বললো আমার ট্রিটমেন্টের দরকার নেই,আমি বাড়ি যাব আর দুলাভাই এর আচরন সম্পর্কে হালকা টাচ দিলো।বোন বললো যে দুলাভাই তো একটু ফাইজলামি করতেই পারে শ্যালিকার সাথে কিছু মনে করিসনা,আসলে বোন ও তার স্বামির কাছে নির্যাতিত।
তখন আবার লকডাউন পরিস্থিতি শুরু হওয়ায় দুলাভাই প্রাইভেটকার ভাড়া করলো শ্যালিকাকে চাদপুররের মতলব তার বাড়িতে পৌছে দেবার জন্য।
রওয়ানা হয়ে চাদপুর না গিয়ে দুলাভাই তার এক ফ্রেন্ডের বাসায় নিয়ে গেলো কেরানিগঞ্জে।দুলাভাই বললো সে তাকে ভালোবাসে এবং ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বিয়ে করতে চায়,মেয়েটি রাজি না হওয়ায় মারধোর করলো এবং বললো পৃথিবীর কেউ তোকে আমার হাত থেকে বাচাতে পারবেনা,আমার অনেক টাকা আছে,এখানেই তোকে আজীবন আটকে রাখবো,আর তোর ভাইদের মেরে ফেলবো কিলার ভাড়া করে।
মেয়েটি এক পর্যায়ে প্রচন্ড ভয় পেলো,নিজের ভাইদের জীবনের কথা ভাবলো, ওদিকে দুলাভাই এর বন্ধু আর তার ওয়াইফ তো সর্বক্ষন লেগেই আছে যে এখানে বিয়ে করো সুখে থাকবা,অনেক টাকা আছে ওর,অনেক ক্ষমতা ও আছে,তোমাকে রাজরানী করে রাখবে,ইত্যাদি ইত্যাদি।
এক পর্যায়ে কাজী ডেকে এনে,গভীর রাতে মেয়ের অমতে জোর করে সাইন নিলো কাবিননামায়।
মেয়েটি সারারাত কেদেছে আর চিৎকার করেছে, যাই হোক সকালে মেয়েকে বাড়িতে পৌছে দিতে রাজি হলো দুলাভাই,পৌছে ও দিলো আর বললো বিয়ের কথা কাউকে বলা যাবেনা,সময় হলে সে জানাবে আর যদি কাউকে জানায় তাহলে মেয়েটির ভাইদের সে খুন করবে।
তখনো মেয়েটি ক্রন্দনরত ছিলো, কি হয়েছে রাতে,কি হবে সামনে, কি হবে তার বোনের সংসারের,কি হবে তার নিজের জীবনের এগুলো চিন্তা করে।
একপর্যায়ে মেয়েটির মনে হলো এই পিশাচের শাস্তি হওয়া উচিত,ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করে বড়োভাই কে সাথে নিয়ে চাদপুর থেকে চলে আসলো শাহবাগ থানায়,তারপর ও মেয়েটির অনেক ভয়,থানায় আসছে জানলে দুলাভাই মেরে ফেলবে,মেয়েটির ভাই এর চোখে মুখেও ভয়,দুলাভাই নাকি টাকা দিয়ে পুলিশ ও কিনে ফেলবে।
সাথে সাথে ওসিকে মামলা রেকর্ডের নির্দেশ দিলাম,ডিসি স্যার কে জানিয়ে টিম রেডি করলাম,রাত ০১ টায় ওই পিশাচকে ধরতে চাদপুর রওয়ানা দিলাম করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই কারন আমি আর সহ্য করতে পারছিলামনা ।দুলাভাই এর বাড়ি ও চাদপুরে,তিনি মেয়েটিকে পৌছে দিয়ে নিজের বাড়িতে গিয়েছেন,আমরা ওর বাড়িতে পৌছানোর আগেই বাড়ি থেকে পালিয়েছে কোনভাবে খবর পেয়ে,পুরা এলাকা তন্ন তন্ন করে (প্রতিটা ঘর)টানা ০৭ ঘন্টা শ্রম দিয়ে অবশেষে তাকে পেলাম।
সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরা ছোট্ট দাড়িওয়ালা ভদ্রলোক(দেখতে),বসান দিলাম যাতে ঠিকমতো হেটে যেতে না পারে, নিয়ে এলাম ঢাকায় এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করলাম।
শেখ মোহাম্মদ শামীম
সহকারী পুলিশ কমিশনার,রমনা জোন,
ডিএমপি,ঢাকা।
Leave a Reply