শামীম আহমেদ,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বাহেরবালী এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম. এ কাসেমকে তাঁর স্বপদে পূর্ণবহাল করা হয়েছে।
স্বপদে বহাল থাকা প্রধান শিক্ষক গত ৬ জুন তাঁর নিজ কর্মস্থল বাহেরবালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ফিরে যাওয়ায় শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, জমিদাতা ও এলাকাবাসী লোকজন।
জানাগেছে, ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাহেরাবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মো: আঃ বাছির মিয়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে এনে অনৈতিকভাবে বহিস্কার করেন। উক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্তে কোন প্রকার সত্যতা খুঁজে পায়নি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বাজিতপুর উপজেলা প্রশাসন। স্বপদে বহালের ব্যাপারে সঠিক প্রতিকার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যানিজিং কমিটির অবৈধ বহিস্কারাদেশের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগি প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। মহামান্য হাইকোর্ট রিট পিটিশন আদেশ বলে ১৩৯৯৮/২০১৯ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকাকে আইনানুগ সমাধানের আদেশ প্রদান করেন।
ওই আদেশে শিক্ষা বোর্ড, স্বারক নং ঢাশিবো/বি/২০২/কিশ ২৩৪৩,তারিখ ২০/০২/২০২০ প্রত্রাদেশে বাহেরবালী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ কাসেমকে বরখাস্তকরণ বিধিসম্মত হয়নি বলে সমাধানপূর্বক উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মো: আঃ বাছির মিয়াকে নির্দেশ প্রদান করেন ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বরখান্তকৃত প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল করে শিক্ষাবোর্ডকে অবহিত করার জন্য। ওই আদেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রভা রাণী দাসকেও জ্ঞাত করা হয়।
কিন্তু ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করেন।
কিন্তু ওই প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল না করায় গত ১৫ মার্চ ২০২০ তারিখে ঢাশিবো/বি/২০২/কিশ/২৪৩৩ নং স্বারক আদেশে স্বয়ংক্রিয় বহালের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠনের অনুমতি প্রদান করেন শিক্ষাবোর্ড। শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশ পেয়ে ওই প্রধান শিক্ষক এডহক কমিটির জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষে গত ১৮ মার্চ শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে সহকারি শিক্ষক তাজুল ইসলামের নামে মনোনয়ন প্রাপ্ত হন এবং অভিভাবক প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন দাখিল করেন। অন্যদিকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ওই প্রধান শিক্ষক স্বপদে বহাল হয়েও তাঁর কর্মস্থল বাহেরবালী উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তখন। বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক আদেশে সীমিত আকারে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু রাখার সুবাদে গত ৬ জুন ২০২০ তারিখে তাঁর নিজ কর্মস্থলে যান বাহেরবালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ কাশেম। স্বপদে পূর্ণবহাল হয়ে পুরোনো ঠিকানায় ফিরে যাওয়ায় মনেপ্রাণে খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, জমিদাতা ও এলাকাবাসী লোকজন। তারা প্রধান শিক্ষককে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয় নতুন করে। তারা চায়, নতুন করে কর্মস্থলে যোগদানের মাধ্যমে আবারো ফিরিয়ে আনবে বিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কাজের গতি ও অবহেলিত জনপদের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ।
অন্যদিকে গত ১৫ মার্চ, ২০২০ শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক এডহক কমিটি গঠনের অনুমতি প্রদান করে অবৈধভাবে বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষককে স্বয়ংক্রিয় বহালের মাধ্যমে বিদ্যালয় ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মো: আঃ বাছির মিয়া ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাপ্তরিক ক্ষমতা আইনগত ভাবে বিলুপ্ত হয়। এছাড়াও গত ২০মে, ম্যানেজিং কমিটির নির্ধারিত মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আর্থিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মো: আঃ বাছির মিয়া ও তাঁর সহযোগিদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আর্থিক লেনদেন বন্ধ রাখার জন্য অগ্রণী ব্যাংক বাজিতপুর শাখাকে প্রশাসনের উর্দ্ধতন মহল থেকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানাগেছে। এছাড়াও স্বপদে বহাল প্রধান শিক্ষক এম এ কাসেমকে তাঁর নিজ কর্মস্থলে যোগদান করে এডহক কমিটির সভাপতি বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরে বিদ্যালয়ের সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, বাহেরবালী এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম. এ কাসমকে স্বপদে পূর্ণবহাল করা হয়েছে। এখন থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো বাধা রইলো না। আশা করি উক্ত বিদ্যালয়টি আগের মতই শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরে পাবে।
Leave a Reply