মোহাম্মদ ইকবাল হোসাঈনঃ-
ফেনীর সোনাগাজীতে আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে দু’পক্ষের হামলা-সংঘর্ষে ৭জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন-ভোরবাজারের রানা বেকারীর কর্মচারী মো. শিপন, যুবলীগ কর্মী মহিম উদ্দিন মহিম, তার ভাই মাহমুদুল হক কাউছার, মো. নূরুল ইসলাম রাসেল, উপজেলা যুবসংহতির সাবেক সভাপতি, ব্যবসায়ী শেখ মাসুদ, ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ ও হৃদয়।
আহতদেরকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ভোরাজারে সোমবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বাজারের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দাবিতে ভোরবাজার নাজিরপুর দাখিল মাদ্রাসার মাঠে ভোর বাজার বণিক সমিতির উদ্যোগে মঙ্গলবার সকালে এক প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। সভায় বাজারে হামলাকারীদের প্রতিহত করতে লাঠি নিয়ে সবাই প্রস্তুত থাকারও ঘোষণা দেন। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করে পরস্পর বিরোধী অভিযোগ করেছেন। থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগও দায়ের করেছেন দু’পক্ষ। এ ঘটনায় পুলিশ মো. শাকিল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ, ব্যবসায়ী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে গত কয়েকমাস যাবৎ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব চৌধূরী রবিনের সাথে নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ছেলে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী মহিম উদ্দিন মহিমের বিরোধ চলে আসছে। গত ২০এপ্রিল রবিনের অনুসারী ইব্রাহীম খান শাকিল নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালায় মহিমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। ওই মামলায় গত ১৫ মে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ৭জুন মহিম কারাগার থেকে মুক্তি পান। রবিনের দাবি জামিনে মুক্তি পেয়ে মহিম ২০-২৫জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে মহড়া দিতে থাকে। সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ফেনী শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাজিরপুর কন্যার মা’র ব্রিজের উপর মহিমের নেতৃত্বে ২০-২৫জন সন্ত্রাসী রবিনের গতিরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। সে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ভোরবাজার চলে যান। রাত ৯টার দিকে ভোর বাজার হাইস্কুল গেইটে সেলিমের চা দোকানের সামনে বসে চা পান করছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি রবিন। এ সময় মহিম তার সহযোগিদের সাথে নিয়ে সেলিমের দোকানের সামনে গিয়ে রবিনকে উদ্দেশ্য করে গালমন্দ করতে থাকেন। রবিন ও মহিমের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। মহিমের সহযোগিরা দোকানে ভাংচুর শুরু করলে এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা মহিম ও তার সহযোগিদের ঘেরাও করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে উভয় পক্ষের ৭জন আহত হয়। কয়েকটি দোকানের বাইরে থাকা বেশকিছু মালামাল ভাংচুর করে মহিম ও তার সহযোগিরা। এ ঘটনায় ওই বাজারের ব্যবসায়ী, উপজেলা যুবসংহতির সাবেক সভাপতি শেখ মাসুদ বাদি হয়ে চেয়ারম্যান পুত্র, যুবলীগ কর্মী মহিম উদ্দিন মহিমকে প্রধান আসামি করে ১৪জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। রবিন সমর্থিত আহতরা হলেন-বেকারীর কর্মচারী মো. শিপন, উপজেলা যুবসংহতির সাবেক সভাপতি, ব্যবসায়ী শেখ মাসুদ, ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ ও হৃদয়।
তবে যুবলীগ কর্মী ও চেয়ারম্যান পুত্র মহিম উদ্দিন মহিম দাবি করলেন উল্টোটা। তার দাবি সে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তিপাওয়ার পর সোমবার রাত ৮টার দিকে আমিরাবাদ ইউনিয়নের সফরপুর গ্রামের তুলাতলিতে তার নানা-নানীর কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে রাত ৯টার দিকে ভোরবাজার পৌঁছলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব চৌধূরী রবিনের নেতৃত্বে ২৫-৩০জন সন্ত্রাসী মহিম ও তার সহযোগিদের উপর হামলা করে। এ সময় মহিম, তার ভাই মাহমুদুল হক কাউছার ও মো. নূরুল ইসলাম রাসেল আহত হয়।
এ ঘটনায় সে বাদি হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব চৌধূরী রবিন, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক রুবেল সহ ১৭জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। হামলা-সংঘর্ষে ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারী আহত হওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ভোর বাজার বণিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন বণিক সমিতির আহবায়ক মো. লিয়াক আলী, সাবেক সেক্রেটারী সাইফুল ইসলাম, মাস্টার আবদুল কুদ্দুস, মো. সেলিম, ফজলুল হক, ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন, অজিত ও রানা প্রমূখ।
এ ব্যপারে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম জানান, আধিপাত্যের বিরোধ নিয়ে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ মো. শাকিল নামে একজনকে আটক করেছে। বাকীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply