সোহানুর রহমান (সোহান)
আমার জীবনে ই পিতা হলো বটবৃক্ষ মাথার উপর এক বিশাল ছায়া যে, ছায়ায় আমি খুঁজে পায় আমার জীবনের দিশা ও অবলম্বন। আমি জানি প্রত্যেক কাছে তার বাবা সাধারণ ব্যক্তি নন। তার পরও আমি বলব আমার আব্বু সত্যি অসাধারণ অতুলনীয় সাংবাদিক -বাবা অনেকর ই আছে কিন্তু আমার আব্বু আমাকে নিয়ে যা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন তা সন্তানের প্রতি গভীর স্নেহের চেয়েও বাড়তি কিছু আমার বাবা সাংবাদিক এম.আর সোহেল সম্পর্কে বলতে গেলে বাবা আমাদের জীবনে সব সময় ই এমন একজন ব্যাক্তি থাকেন যার প্রভাবে আমরা আজকে আমি হয়ে উঠি। আমাদের অনেকের কাছে সেই মানুষটি পরিচয়”বাবা” তিনি একজন বাবা হবার পাশাপাশি কখনো আমার একজন ভালো বন্ধু, শিক্ষক, গাইডেন্স এবং আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু এমন কি আমার পরামর্শদাতা। সবকিছু মিলিয়ে এক নাম তিনি আর কেউ নন আমার বাবা। একজন বাবা তার সন্তানের প্রথম রোল মডেল। তিনি হলেন এমন একজন নায়ক যাকে আমি দেখে বড় হয়েছি। পৃথিবীর প্রতিটা প্রান্ত থেকে সন্তানের কানে ভাসছে বাবার ঐ ডাক- আয় খুকু আয়….. দুই অক্ষরের সমন্বয়ে উচ্চারিত বাবা ডাক-এর মধ্যে লুকিয়ে আছে, সীমাহীন ভালোবাসা, আবেগ আর বটবৃক্ষেরর ছায়া। সন্তানের মুখে “বাবা “ডাক ভুলিয়ে দেয় পিতার বুকের ভেতরের দুঃখ আর কষ্টগুলো ভূলিয়ে দেয় আর্থিক অনটনের কথাও। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা তার বিশাল ছায়ার নিচে আজকের এই শিশুটি বড় একদিন হবে মানুষ হবে, সন্তানের পরিচয়ে বাবা পরিচিত বাড়বে। শৈশবে যে, বাবার হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে পথচলা শুরু হয়। সেই হাত ধরেই আমাদের জীবনে শৈশবে-কৈশের পেরিয়ে যায়। কবে যে, ধরা হাত বিচ্ছিন্ন হাত নিজের পায়ে দাড়িঁয়ে পড়ি তা টের পাই না কেউ ই। পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি বাবার বয়স বেড়ে গেছে। এই পথপ্রদর্শক বাবাই এক সময় আমার ভালো বন্ধু, এক সময় শাসক ছিলেন। তাঁর বিশাল বটবৃক্ষের ছায়ার নিচেই সন্তানতুল্য গাছগুলো বিকাশিত হয়েছে। জীবনে এই বিশাল ছায়াটি প্রতি মাথানত করার জন্যই “বাবা দিবসের জন্ম” তবে আমার মতে বাবা-মা কে ভালোবাসতে বিশেষ কোনো দিবস প্রয়োজন হয় না। তবে বাবা দিবস নিয়ে রয়েছে সূদূর ইতিহাস বিভিন্ন বই-পুস্তুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সেইসব ইতিহাস জানতে পারি। সেটা ১৯০৯ সালের কথা ওয়াশিংটন রাজ্যের স্পেকেন শহরের মেয়ে সোনোরা লুইস স্মার্ট তাঁর প্রিয় বাবাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বাবা দিবস পালনের প্রথম দাবি জানান। সেনোরার বাবা উইরিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন লড়াকু সৈনিক ছিলেন। ১৮৯৮ সালে সোনেরা মা ইলেন স্মার্ট তার ৬ষ্ঠ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা যায়। মায়ের মৃত্যুতে এতগুলো সন্তান দেখাশুনার ভার বহনে দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই বাবা উইলিয়ামের কাঁদে চলে যায়। আমেরিকার মুক্তির জন্য যে উইলিয়াম স্মার্ট লড়াই করেছিলেন তিনি আবারও জীবন যুদ্ধে নেমে পড়লেন ছয়টি সন্তানের জন্য তিনি ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে কাজ করে সোনোরার বাবা তার সুখ, শান্তি, আহলাদ বিসর্জন দিয়েই সন্তানদের মানুষ করতে লাগলেন। বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমে ছয়জন সন্তানই একদিন মানুষ হলো। সেনোরা বড়ো হয়ে বাবার এই আত্ম ত্যাগ অনুধাবন করতে পারল।সেনোরার চোখে তার বাবা ছিলেন একজন সাহসী আর নিঃস্বার্থ পিতা একজন শ্রেষ্ঠ বাবা। আর তখন থেকেই সে ” বাবা দিবস”এর কথা চিন্তা করতে লাগলো। বাবা উইলিয়াম স্মার্ট -এর জন্ম দিন ছিলো ৫ জুন। তাই সোনোরার বাবার জন্মদিন ৫জুন তারিখে চার্চের মাধ্যমে অনুষ্ঠান করার জন্য ওয়াশির্টন রাজ্যে স্পোকেনের কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেন। স্পোকেনের সিটি প্রশাসন এবং লোকাল ইয়াংম্যানস ক্রিশ্চিয়ন অ্যাসোসিয়েশন এ উদ্যোগকে সমর্থন দেন। সেনোরার উদ্যোগে সর্বপ্রথম ১৯১০সালে ১৯ ই জুন তৃতীয় রবিবার জুন মাসের স্পোকেনইন সিটিতে “ফাদারস ডে”পালন করা হয়। এর পর ১৯১৬সালে প্রেসিডেন্ট উডরো টাইলসন জাতীয় পর্যায়ে ফার্দাস-ডে কে স্বীকৃতি দান করেন এবং ১৯২৪ সালে তখনকার প্রেসিডেন্ট “কালভিন ” কুলিজ বাবা দিবসকে সরকারী দিবস হিসাবে পালনের সুপারিশ করেন। এর পর ১৯২৫ সালে জাতীয় বাবা দিবস কমিটির সদস্যরা প্রথম বারের মক নিউইর্য়ক সিটিতে সমবেত হন। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে বাবা দিবস কংগ্রের প্রস্তাবনা পাশ হয় এবং ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডসান জনসন বাবা দিবসকে জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৭২ সাল তখনকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিকসন সেই প্রস্তাবই সই করে। “বাবা দিবস” কে জাতীয় ভাবে পালনে আইনগত বৈধতা দেন।সেি থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ আস্ট্রেরিয়া, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। বাবার প্রতি সন্তানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা হিসাবে পালিত হচ্ছে। বাবার প্রতি সন্তানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা হিসাবে এ দিবসের উৎপত্তি সেই থেকে সন্তানরা নানান প্রক্রিয়া ও প্রন্থার মাধ্যমে এ দিবস পালন করে আসছে। সন্তান যত বড় ই হোক তাঁর অভিমান আর অবহেলার যত বড়ই হোক, তার অভিমান আর অবহেলার গুণিতক যতই বিশাল হোক, বাবা স্নেহের দরজাটা সব সময় খোলা থাকে তার সন্তানের জন্য বাবাকে যারা বেছে নিতে পারেন বন্ধু হিসাবে তাদের জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দে, কষ্টের তীব্রতায় আর কঠিন সংগ্রামে বাবাই হয়ে ওঠেন বিপদের বন্ধু পরিশেষে, পৃথিবী’র সকল বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের ভাষায় বলতে হয়।
তুমি কি গো পিতা আমাদের
ওই যে, নেহারি মুখ অতুল স্নেহের
ওউ যে নয়নে তব
অরুণ কিরণ নব,
বিমল চরণ-তলে ফুল ফুটেছে প্রভাতে
ওই যে স্নেহের রবে
ডাকিছ মোদের সবে।
লেখক: কবি ও শিক্ষার্থী, হাজী আসমত কলেজ ভৈরব।
Leave a Reply