‘উপাচার্য’ হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পড়াশোনা ও গবেষণায় বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ ও সেইমত কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সর্বোচ্চ কার্যকরী একটি পদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। এর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান হচ্ছেন একজন উপাচার্য।
আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে কর্মরত। বর্তমানে ঢাকার লিয়াঁজ্যো অফিসে চতুর্থ বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে উক্ত ব্যাচের কোর্স সিনিয়র এর দায়িত্বে আছি। তাই বেরোবি’র উপাচার্য পদের আদ্যোপান্ত বিষয়ের গভীরে গিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ দেয়া আমার পক্ষে মুশকিল। মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট
চিরকৃতজ্ঞতা জানাই যে একটি প্রথিতযশা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুবাদে একজন উপাচার্যের কাজ ও দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তর জানার সুযোগ হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছাত্র থাকা অবস্থায় যৌক্তিক-অযৌক্তিক নানারকম উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন দেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। সেইসকল অভিজ্ঞতার নিরীখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারকে পেয়েছি একজন আদর্শ উপাচার্য হিসেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন দেখেছি উপাচার্যগণকে কিভাবে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিক-অযৌক্তিক দাবির মুখে সরে যেতে হয়েছে। সেই প্রশ্নে আর না যাই। খুব কাছ থেকে দেখেছি একজন অধ্যাপক উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের তিন থেকে চার মাস পর পরিচ্ছন্ন ইমেজের সেই অধ্যাপকের অবস্থা কী করুণ থেকে করুণতর হতে থাকে। দেশের যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে গতানুগতিক ধারায় উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন মঞ্চায়ন করা হয়। প্রায়শই তার পেছনে থাকে এক বা একাধিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কুচক্র। এইসকল অমূলক উপাচার্য বিরোধী মঞ্চ নাটকের রিহার্সেল, সম্প্রচার ইত্যাদির দুষ্টচক্রে পড়ে যান অনেক পরিচ্ছন্ন ইমেজের অধ্যাপকও। এই পুনরাবৃত্তিমূলক নাটকের সফল পরিনতিতে এই কথা বলা যায় যে, কোন না কোন সময়ে সব উপাচার্যই নিরুপায় একজন মানুষ। অনেকাংশে ঢাল তলোয়ার হীন নিধিরাম সর্দার। আর এই চক্র দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে ও দক্ষ মানবসম্পদ গঠনসহ একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে উন্নীত করার পথে অন্যতম বাঁধা হিসেবে কাজ করছে।
তবে এই ধারায় ব্যতিক্রমী এই বেরোবি। এই ব্যতিক্রম ধারায় নিয়ে আসার পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে বর্তমান উপাচার্য মহোদয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম। এর আগে আরো তিন জন অধ্যাপক উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অপ্রিয় হলেও সত্য দুর্নীতি মামলায় বাংলাদেশে প্রথম উপাচার্য হিসাবে জেলে যাওয়ার খ্যাতি অর্জন করেন এই বেরোবি’র উপাচার্য জলিল মিয়া। ২০১৭ সালের ১৪ জুন অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা, নিয়োগ বাণিজ্য, সততা,দক্ষতা ও আন্তরিকতাহীন উপাচার্যের পদচ্যুতির পর প্রায় এক অচল বিশ্ববিদ্যালয় কে সচল করার জন্য উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান মেধাবী, কর্মদক্ষ,নিরলস পরিশ্রমী এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বহু টিভি টক-শোর দক্ষ আলোচক প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞান অর্জনের এক উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে উত্তর বঙ্গের এই বিদ্যাপীঠকে একটি আদর্শ ও পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেশনজট নিরসন, শিক্ষক-কর্মকর্তা -কর্মচারীদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা , ক্যাম্পাস রেডিও চালু, আইডি কার্ড প্রদান, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করা, লাইব্রেরির সুবিধা বৃদ্ধি, পরিবহন সেবার প্রসার, নারী উন্নয়নে উইমেন পিস ক্যাপে, বন্ধ ক্যাফেটেরিয়া চালু,সমগ্র ক্যাম্পাসকে ওয়াই ফাই সুবিধার আওতায় আনা, ভার্চুয়াল ক্লাস রুম স্থাপন, নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা কে প্রাধান্য, ডক্টর ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট এর গবেষণা প্রসারে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা এবং এগুলোকে কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করণ, করোনা ক্রান্তিকালে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এককালীন আর্থিক সাহায্যের ব্যাবস্থা করা সহ আরো নানা উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পথে এগিয়ে চলেছেন তিনি।
বেরোবি তে পূর্বে উপাচার্য ছিলেন, বর্তমানে আছেন,ভবিষ্যতে ও আসবেন। তবে প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারের মতো বহুগুণের অধিকারী ও নিরলস পরিশ্রমী উপাচার্য পাওয়া দুষ্কর হবে। তাই আসুন সবাই উপাচার্য বিরোধী মঞ্চের নাটক বন্ধ করে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য মহোদয়গণের অর্পিত দায়িত্ব পালনে সহায়ক ভূমিকা পালন করি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অধ্যাপক কে উপাচার্য পদে দায়িত্ব দেওয়া অসম্ভব ও অযৌক্তিক। একজন ক্লিন ইমেজের উপাচার্য কে দয়া করে ক্রিটিক্যাল না করি।
Leave a Reply