– জোয়ার্দার জাফর সাদিক, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও
সহকারী অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বেরোবি, রংপুর।
নতুন কিছুকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করার ব্যাপারে সর্বদায় আমাদের অনেকের মধ্যেই থাকে চরম অনীহা। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন সেটির গুণাগু্ণ প্রকাশ পেতে থাকে এবং উদ্দেশ্য সকলের কাছে অর্থবহ হতে থাকে তখন দেখা যায় সেটিকে নিয়েই শুরু হয়েছে সব মহলে বিস্তর আলোচনা। তাছাড়া যুগের অগ্রবর্তী হয়ে চিন্তা করার দক্ষতা ও সৎ সাহস সবার থাকে না। এরকমই এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর থাকাকালীন সেখানেও তাঁর সহায়তায় নবীন শিক্ষকদের জন্য ট্রেইনিংয়ের ব্যাবস্থা চালু হয়েছে।
তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এও উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নবনিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য পাইলটিং করেছেন ৬ মাসব্যাপী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স। পরবর্তীতে একই ধারাবাহিকতায় চালু করেছেন কর্মকর্তাদের জন্য ৪ মাসব্যাপী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স ও কর্মচারীদের জন্য ২ মাসব্যাপী ইন্ডাকশন ট্রেইনিং কোর্স। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এরূপ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
নিজে একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যাপারে বলতে গেলে অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে সদ্য একাডেমিক জীবনের একটি নির্দিষ্ট ধাপ অতিক্রম করে এসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মত গুরুদায়িত্ব পালন করা কখনই খুব সহজ কিছু নয়। আর তাই যোগদানের পরপরই এরূপ প্রশিক্ষণ নিঃসন্দেহে একজন নবনিযুক্ত শিক্ষকের মেধা, আত্মবিশ্বাস ও দূরদর্শিতাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে। আর বুনিয়াদি প্রশিক্ষন কোর্সে যেহেতু অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি গবেষণা ও বাংলাদেশ বিষয়াবলীকে গুরুত্বারোপ করা হয় সেহেতু এই প্রশিক্ষণ একজন শিক্ষকের অন্যতম দায়িত্ব পালনে তথা গবেষণা কাজে নিজেকে লিপ্ত রাখা ও পাঠদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এবং যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়কে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের জন্য প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানাবিধ প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য সেই অর্থে কোন প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী জীবনের শুরুতেই শিক্ষকবৃন্দের পাশাপাশি একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্যও এরূপ প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিয়ে নিশ্চয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর বর্তমান মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার প্রশংসার দাবী রাখেন।
সেই আলোকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এ শিক্ষকতা করার সুবাদে মনে হয়েছে শুধু শিক্ষক, কর্মকর্তা আর কর্মচারী কেন, সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রাখা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত ৭ দিনের হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিষ্টাচার সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ কোর্স থাকা উচিত। ফলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার নবনিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য যে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছেন সেটা নিঃসন্দেহে তার উদ্ভাবনী চিন্তা ও দূরদর্শিতার পরিচায়ক এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুকরণীয় একটি বিষয়। যদিও খুব ভালোমতই জানি যে শিষ্টাচার কাউকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শেখানোর মতন বিষয় নয়। তবুও আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর কেবলমাত্র পাঠ্যসূচিতেই নয় বরং উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবার ব্যাপারেও মনযোগী হওয়া প্রয়োজন। আর একাডেমিকভাবে ভালো ফলাফলের পাশাপাশি অন্যকে শ্রদ্ধা ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনটাও যেন তার সিলেবাস থেকে বাদ না যায় এ ব্যাপারে শুরুতেই তাকে সতর্ক করে দেয়াটাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পরে। আর শিক্ষার্থীদের প্রতি এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে একজন নবনিযুক্ত শিক্ষকের জন্য বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিঃসন্দেহে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। আর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানানো এবং যিনি সমস্ত কিছু মাথায় রেখে যুগের অগ্রবর্তী হয়ে চিন্তাটি করেছিলেন।
করোনাকালে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও আমার দৃষ্টিগোচর হওয়াতে এহেন বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে বাধ্য হয়েছি। ভিডিওর আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণে না যেয়ে যতটুকু দেখেছি তার সারমর্ম হলো, ঢাকাস্থ কোন একটি কলেজের একজন শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন এবং যাদের ক্লাস নিচ্ছেন তাদের মধ্য থেকে কেউ একজন অত্যন্ত অশালীনভাবে শব্দ করে যাচ্ছে এবং উক্ত শিক্ষক মহোদয়কে নানাভাবে বিব্রত করে যাচ্ছে। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগে এই অনলাইন ক্লাসের যুগে তাৎক্ষণিকভাবে অসদাচরণকারী ওই শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করতে না পেরে উক্ত শিক্ষক মহোদয়ের অসহায়ত্ব দেখে সবচেয়ে খারাপ লেগেছে। নিজে একজন শিক্ষক বলে হয়ত কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারি যে ওই মুহূর্তে একজন শিক্ষক হিসেবে কতখানি অপমানিত বোধ করবার কথা। একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এই ব্যবহার কোনদিনই, কোন অবস্থাতেই প্রাপ্য নয়। তাই ভিতরে ভিতরে অনুভব করেছি যে যত ভালো ফলাফল অর্জন করেই কোন শিক্ষার্থী বের হোকনা কেন তার মধ্যে শিষ্টাচারের অভাব থাকলে তা শুধুমাত্র শিক্ষাঙ্গন নয় বরং ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আমি জানি, কোন প্রশিক্ষণ কখনই কারও ভবিষ্যতে ওই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ দক্ষতার নিশ্চয়তা দেয়না, আবার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোন একজন, দুইজনের ভবিষ্যতের কোন অসৎ কর্মকান্ড পুরো প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনা। বরং আমার মনে হয় এটা সেই একজন, দুইজনের দৈন্যতা যে তারা ঐ প্রশিক্ষণকে নিজের অথবা জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারেনি।
Leave a Reply