ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীর ফরহাদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন বিগত বহু বছর যাবত এলাকাবাসীর শত শত একর জমি জবর দখল করে আসছে। এ অত্যাচারের প্রথা ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে বলে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে। এরা সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে এ জবর দখল চালাচ্ছে। ভুক্তভোগী কেহ প্রতিবাদ জানালে তাকে বাড়ি গিয়ে হামলা করে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। এতে চেয়ারম্যানের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছেনা এলাকাবাসী। আর এতে ইউনিয়নের বহু মানুষ ভুমি হারা হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
বিস্তারিত খোজ নিয়ে জানা গেছে, ভুমি আত্মসাতের এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১৯৯৭ সাল থেকে। ১৯৯৭ সালে এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ এলাকাবাসীর ফসলি জমি জবর দখল করে বিশাল বিশাল দীঘি খনন করে। এ দীঘিগুলোতে নিরীহ মানুষের শত শত একর জমি ঢুকে গেছে। এ দীঘিগুলো প্রতিটি ৫ থেকে ২০ একরে বিস্তৃত। এ দীঘিগুলোতে প্রথমে সে মাছ চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে সে এক পর্যায়ে এ দীঘিগুলো মোটা অংকের টাকায় ইজারা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুমি জবর দখলের এ কৌশলের প্রথম প্রবর্তক এ সাবেক চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ।
পরবর্তীতে একই কায়দায় ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ জবর দখলের কালো থাবা আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তৎকালীন চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বাচ্চু চার দলীয় জোট সরকারের প্রভাব খাটিয়ে ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে নিরীহ মানুষের শত শত একর জমি জবর দখল করে নেয়। পরে এসব জবর দখলকৃত জমিতে শতাধিক দীঘি খনন করে অবাধে মাছ চাষ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। একপর্যায়ে এ বাচ্চু চেয়ারম্যানও এসব দীঘি ইজারা দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। জানা গেছে, বর্তমানেও বাচ্চু চেয়ারম্যান এসব জমিতে মাছ চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে নিচ্ছে।
এরপর বর্তমান চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন টিপু একই ধারাবাহিকতায় আগের মত সাধারণ মানুষের শত শত একর জমি জবর দখল করে অনেকগুলি দীঘি খনন করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। সে ইতিমধ্যে বৃহৎ আকারের দুটি দীঘি খনন করে ফেলেছে। তম্মধ্যে একটি বড় দীঘি বেআইনীভাবে ইজারা দিয়ে ৯৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে আরো একটি নতুন দীঘি খননের কাজে মাটি কাটার মেশিন (স্কেভেটর মেশিন) কাজ করছে বলে জানা গেছে। এ জমির ভুক্তভোগী মালিকরা এতে তীব্র প্রতিবাদ করলেও কর্ণপাত করছে না ভুমি খেকো মোশারফ হোসেন টিপু ও তার পালিত সন্ত্রাসীরা। প্রতিবাদী নিরীহ মানুষকে তার পালিত সন্ত্রাসীরা পথে ঘাটে বেশ কয়েকবার লাঞ্চিত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। দু-একজন প্রতিবাদীকে বাড়িতে গিয়ে লাঞ্চি¦ত করেছে এ সন্ত্রাসীরা। তাছাড়া টিপু চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ভোর বাজার বাজার কমিটির সভাপতি আবুল বশর, গিয়াস উদ্দিন মেম্বার, বশির আহাম্মদ মেম্বার, সাইফুল ইসলাম, ডাঃ কামরুল, জাহাঙ্গীর হাবিলদার, মৃত জাকির আহাম্মদের ছেলে জাহিদ হোসেন বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যুবলীগ সভাপতি মোঃ দিদার, চরকালিদাস গ্রামের লন্ডনী হাজী বাড়ীর নুরুল হুদা, মোঃ মোস্তফা, আবদুল হাই সওদাগর, আবু তালেব, মৃত মুন্সী জাকের আহাম্মদের ছেলে তালেব আহাম্মদ ও সামছুল হক, সর্দার বাড়ির জসিম উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম সহ শত শত গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ভোর বাজার বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছে। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, টিপু চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসীরা তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ায় তিনি এমনটি করেছেন।
এ ছাড়াও ১৩নং ফরহাদনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৮/১০জন মেম্বারের সাথে কথা বলেও তার জোর-জুলুম অত্যাচারের নানা তথ্য জানা গেছে। টিপু চেয়ারম্যান অনেক রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের কাজ না করেই উন্নয়ন কর্মকান্ডের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে মেম্বারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এভাবে টিপু চেয়ারম্যান গ্রামবাসীর জমি জবর দখল করতে থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চর কালিদাস গ্রামের সকল ফসলি জমি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং ভুমিহারা হয়ে বিপদগ্রস্ত হবে এ গ্রামের বহু মানুষ। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন টিপুর সাথে কথা বললে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে।
Leave a Reply