হরিরাম বর্মন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের পশুর হাট বসলেও গরুর ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজি, করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্রেতা কম। কোরবানির হাটে ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারিরা গরু-ছাগল পরিচর্যা করেন। ক্রেতা কম থাকায় ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। কম দামে গরু বিক্রি করলে আসল পুঁজিও না ওঠার শঙ্কায় আছেন তারা। অন্যান্য বছর সারাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা এসে গরু কিনে নিয়ে যেত। এবারে বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এখনও আসেনি। ফলে হাটে ক্রেতা নেই বললেই চলে। ফলে ঈদের হাটে গরু বিক্রির আশায় বসে থাকা খামারি ও গরু ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তায় আছেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৭ হাজার ৯৮০ জন খামারির তালিকাভুক্ত পশুর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। এছাড়াও জেলায় কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সৌখিন পরিবারের প্রায় আরও ২০ হাজার পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
বোদা উপজেলার নগরকুমারী হাটে গরু আমদানির তুলনায় ক্রেতা কম। গতবছর যে গরুর দাম ৩০-৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এবার সেরকম গরু ২০-২৫ হাজার টাকা বলছেন ক্রেতারা। হাটে সবোর্চ্চ দেড় লাখ টাকা মূল্যের ষাঁড় উঠেছে। তবে ক্রেতারা দাম বলেছে ৯০ হাজার।
বোদা উপজেলার কুড়ালিপাড়া এলাকার খামারি হকিকুল ইসলাম ও আব্দুল মতিন জানান, ওষুধ, কীটনাশকে নয় প্রাকৃতিক উপায়ে খড়-ঘাস খৈল ভূষি ভাতের মাড় খাইয়ে গরুগুলোতে বিক্রি উপযোগী করা হয়েছে। একদিকে করোনা পরিস্থিতি, গরুর ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। অন্যদিকে গরুর খাবারের দাম বেশি। গো খাদ্যের সংকট। তারওপর হাটবাজারে গরুর ব্যবসায়ীরা না আসায় গরুর দাম কমেছে। একারণে আমরা গরু বিক্রি করতে পারিনি।
জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের গরুর খামারি আব্দুল আজিজ জানান, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কোনও গরু আক্রান্ত হলে নূন্যতম ২০ দিন সেবা করতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
সমশের নগর এলাকার আসাদুল্লাহ আসাদ ও তোয়াবুর রহমান বলেন এমনিতেই গরু পরিচর্যায় অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। বাজারে যে দাম বলছে তাতে গরু বিক্রি করলে আসল তো দূরের কথা খরচের টাকাও উঠবে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের খামার বন্ধ হয়ে যাবে।’
গরুর হাটে জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা নেই আবার ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না কেউ অভিযোগ করেছেন আহম্মদ ইসলাম নামে এক ক্রেতা।
জেলার বোদা নগরকুমারী হাটে গরু কিনতে আসা আমিনার রহমান, জানান করোনা, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজসহ নানা কারণে এখনও গরুর বাজার এখনও জমে উঠেনি। ক্রেতাদের সমাগমও কম। ঈদ ঘনিয়ে আসলে বাজার জমে উঠতে পারে।
গরু বিক্রেতা আসাদ হোসেন বলেন, ‘বাইরের ক্রেতারা না আসায় গরুর দাম কম। গরুর অসুখ আর করোনার ভয় ও আতঙ্কে গরুর হাটবাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কম। ঈদের আগে ও পরে গণপরিবহন বন্ধ থাকলে এবার গরু বিক্রি করে লাভবান হওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
নগরকুমারী হাটের ইজারাদার আব্দুর রহমান জানান, আমদানি মোটামুটি হলেও করোনা ভাইরাস ও গরুর ডিজিজের কারণে গরুর হাটে ক্রেতা কম। এছাড়া এবার এখনও বাইরের গরু ব্যবসায়ীরা আসেনি।
পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মজিদ জানান, কোরবানির জন্য জেলায় ৪৬ হাজার পশু চাহিদা রয়েছে। এখানে চাহিদার কোনও ঘাটতি হবে না। বরং জেলায় পশু সারপ্লাস রয়েছে। করোনার কারণে এবার কোরবানির পশু বিক্রির বিষয়টি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করবে। ঈদের আগে বা পরে পশু যাতায়াতের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে না বলেও মনে করেন তিনি।
Leave a Reply