জামাল উদ্দিন স্বপন
মায়ের উচ্ছৃঙ্খলতা ও পরকীয়ার বলি হলেন মেধাবী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মেয়ে মাহমুদা আক্তার ঊর্মি (১৪)। ঊর্মির মা চার সন্তানের জননী হালিমা বেগম (২৬) তার পিতা মজিবুল হকের প্রবাসে থাকার সুযোগে উচ্ছৃঙ্খল জীবন ও পরকীয়ায় জড়িয়ে দুই সন্তানের জনক নুরে আলমকে বিয়ে করে। এ খবর পেয়ে গত ৭ মাস পূর্বে ঊর্মির পিতা ওমান প্রবাসী মজিবুল হক প্রবাস থেকে দেশে আসেন। মজিবুল হক প্রবাসে থাকা অবস্থায় সব টাকা স্ত্রী হালিমার নামে প্রেরণ করতেন। হালিমা সব টাকা নিয়ে পরকীয়া প্রেমিক নুরে আলমের সাথে পালিয়ে যায়। মজিবুল হক স্ত্রী ও টাকা-পয়সা হারিয়ে পাগল প্রায় । পারিবারিক অশান্তির মধ্যে চার ছেলে-মেয়ে কখনো পিতার নিকট কখনো মায়ের নিকট অবস্থান করে।
অবশেষে ‘‘মা এবং বাবা কারো কাছে শান্তি পেলাম না” এ চিরকুট লিখে বিষপানে নিজের জীবনের ইতি ঘটান মেধাবী মাদরাসা শিক্ষার্থী কিশোরী মাহমুদা আক্তার ঊর্মি (১৪)।
রবিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে নানার বাড়ি নাঙ্গলকোটের রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের উত্তর মাহিনী গ্রামে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ঊর্মি। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাকে প্রথমে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে আশংকাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে পরিবারের লোকজন তার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে। মাহমুদা আক্তারের লাশ ঘরে রেখে তার মা হালিমা বেগম সৎ বাবা নুরে আলমকে নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় মাহমুদার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। মাহমুদা আক্তার একই ইউনিয়নের কুকুরিখিল গ্রামের প্রবাসী মজিবুল হকের মেয়ে। মাহমুদা মাহিনী লতিফিয়া এনামিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ ব্যাপারে মাহমুদার পিতা মজিবুল হক থানায় অপ-মৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের মাহিনী গ্রামের চাঁন মিয়া কবিরাজ বাড়ির আলী মিয়া একমাত্র মেয়ে হালিমা বেগমকে তার আপন বোনের ছেলে একই ইউনিয়নের কুকিরিখিল গ্রামের মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মজিবুল হকের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর মজিবুল হক ওমান চলে যায়। এর মধ্যে তাদের চার সন্তান জন্ম হয়। মজিবুল হক প্রবাসে থাকা অবস্থায় সব টাকা তার স্ত্রী হালিমা বেগমের নামে প্রেরণ করে। এদিকে হালিমা মা-বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় তার পিতা আলী মিয়া সব সম্পত্তি মেয়ের নামে লিখে দেন। হালিমা বেগম পিতা এবং স্বামীর টাকা পেয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন এবং পরকীয়ায় লিপ্ত হন।
গত ৭/৮ মাস পূর্বে হালিমা বেগম একই ইউপির পূর্ব খাড়ঘর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে দুই সন্তানের জনক ভাগিনা সম্পর্কীয় নূরে আলমের সাথে পরকিয়ার জেরে আটক হন।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মজিবুল হক ওমান থেকে দেশে আসার খবরে হালিমা বেগম পরকিয়া প্রেমিক নুরে আলমকে পালিয়ে বিয়ে করেন। এরপর থেকে হালিমা বেগম তার দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে পিতার বাড়ি উত্তর মাহিনী গ্রামে অবস্থান করেন । হালিমা বেগমের পূর্বের স্বামীর ছেলে-মেয়েরা কখনো তার কাছে আবার কখনো তাদের পিতার বাড়ি কুকিরিখিল গ্রামে থাকতেন। মেয়ে নিহত মাহমুদা আক্তার লেখাপড়ার সুবাদে মায়ের সাথে নানার বাড়িতে থাকতেন। হালিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামীর সাথেও বিচ্ছেদ ঘটে। পরে হালিমা বেগম আবারো নুরে আলমকে বিয়ে করেন। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়। পরে গ্রামবাসী হালিমা বেগম এবং তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে।
নিহতের বাবা মজিবুল হক অভিযোগ করে বলেন, তার স্ত্রী হালিমা বেগম খারাপ চরিত্রের মহিলা। আমার জীবনের সব সঞ্চয় শেষ করে আমাকে সর্বস্বান্ত করে এখন তারা আমার মেয়েকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
নাঙ্গলকোট থানার ওসি মোঃ বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে নিহত মাহমুদার পিতা মজিবুল হক থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
Leave a Reply