আহমদ আল মাসউদ
(গোয়াইনঘাট) সিলেট ঃ
বৃষ্টিস্নাত সবুজ প্রকৃতি ক’দিনে যেন আরও সবুজ হয়ে উঠেছে। চারদিকে সবুজে ঘেরা ছোট-বড় পাহাড়-টিলা। মেঘে ঢাকা আকাশ যেন সত্যি হেলান দিয়েছে পাহাড়ের গায়ে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার জলে পাথরগুলোর অনেকখানি ডুবে গেছে। সবুজের সমারোহের বুক চিরে চলে যাওয়া নদীর টলটলে পানি যেন ডাকছে সবাইকে। এমন মোহনীয় রূপের প্রকৃতিতে নেই কোনো কোলাহল; চারদিক নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ। ‘প্রকৃতিকন্যা’ জাফলং মনের মতো সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে; অনেক দিন দেখতে আসছে না কেউ।
আর ক’দিন পর ঈদুল আজহা; ঈদুল ফিতর চলে গেছে। এ সময়ে পর্যটকদেরও বাঁধনহারার মতো ছুটে আসার কথা। প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের পদচারণায় সিলেটের গোয়াইনঘাটের পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের মুখর হওয়ার কথা ছিল। বর্ষা মৌসুমেই প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল নামে সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রায় চার মাস ধরে কেউ আসছে না। মার্চের শুরু থেকেই জাফলং কার্যত শাটডাউন। দেশের একমাত্র জলাবন রাতারগুল ও বিছনাকান্দিতেও একই চিত্র।
পুণ্যভূমি সিলেটে বেড়াতে আসা মানুষ মাজার জিয়ারতের পাশাপাশি প্রকৃতিতে অবগাহনের সুযোগ সহজে হাতছাড়া করতে চান না। সবুজ চা বাগানের পাশাপাশি সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝরনা, পাহাড়-টিলা, পাথর-বালু মিলে অনন্য এক সৌন্দর্যের সাগরে ডুব দেওয়ার অনুভূতি। পর্যটনের জন্য শীতকাল আদর্শ হলেও বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকা গাছপালার সঙ্গে নানা প্রজাতির পশু-পাখির জলাবন রাতারগুল ,মায়াবন,পান্তুমাই, পাথররাজ্য বিছনাকান্দির টানে ছুটে আসে হাজারো পর্যটক।
এই পর্যটকদের আনাগোনাকে ঘিরেই জাফলং, রাতারগুল, পান্তুমাই ও বিছনাকান্দিতে হাজারো মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে। পরিবহন শ্রমিক, নৌকার মাঝি, গাইড, আলোকচিত্রীসহ অনেকের জীবিকার মাধ্যম পর্যটকরা। নগরীর হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে আসা মানুষের অপেক্ষায় অসংখ্য হোটেল, রেস্টুরেন্ট। প্রতি বছর ঈদের সময় এই হোটেলগুলোতে বুকিং পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। করোনার জন্য এবারে হোটেলগুলো বন্ধ, নেই ঈদের বুকিংয়ের চাপ। কয়েকদিন আগে রেস্টুরেন্টগুলো খুললেও নেই ক্রেতাদের আনাগোনা। পর্যটকরা আসছে না বলে রেস্টুরেন্টে নেই ব্যস্ততা।
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে সিলেটে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ চরম সংকটে রয়েছে। জাফলং পিকনিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক সুব্রত দেব বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ সরকার সারাদেশে ছুটি ঘোষণা করে। তবে ১০ মার্চ থেকেই জাফলংয়ে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ। এখানে পর্যটকদের জন্য দেড়শ’র মতো নৌকার মাঝি ও সাড়ে তিনশ’ গাইড ছাড়াও চারশ’ ব্যবসায়ী রয়েছেন। পর্যটক আসা বন্ধ হওয়ায় তাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।’
সংগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প এলাকার জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্টের মালিক উমর ফারুক বলেন, ‘করোনার জন্য সবকিছু বন্ধ থাকায় অসংখ্য মানুষ চরম সংকটে পড়েছে। এখানে ব্যবসায়ীদের টার্গেট কাস্টমার পর্যটকরা। এতদিন ধরে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় ক্রেতার অভাবে তারা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।’
কয়েক বছর ধরে নৌকায় পর্যটকদের জলাবন রাতারগুল ঘুরিয়ে দেখানোই আমির হোসেনের প্রধান জীবিকা। এই সময়ে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় তার মতো কয়েকশ’ নৌকার মাঝি বিপদে পড়েছেন। ঈদের সময় পর্যটক সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায় রোজগারও বেশি হয়। এবারে তা হবে না। এতে
এদিকে পর্যটকদের জন্য নগরীতে গড়ে ওঠা হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় এই খাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ঈদের সময় মূল ব্যবসা হয়। এবারে তাও বন্ধ।’
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কবে নাগাদ পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হবে, তা নিয়েও অ সবমিলে ঈদের সময়ের ক্ষতির পাশাপাশি সিলেটে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
Leave a Reply