“”
মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে মানবতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যতে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে, তাদের পাঠ্যক্রমে র বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান আহরণ; লিখিত, মৌখিক ও ইলেট্রনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা অর্জন এবং সর্বাধুনিক প্রায়োগিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে যুগোপযোগী জ্ঞান বিতরণের লক্ষ্যে রংপুরের মানুষের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফসল হিসেবে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর রংপুরে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), রংপুর প্রতিষ্ঠিত হয়। রংপুর বিভাগের একমাত্র সাধারন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে জিম্মি হওয়ায় এর সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। বেরোবি, রংপুরের ক্রান্তিলগ্নে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২০১৭ সালের ১৪ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের গ্রেড-১ প্রফেসর এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারকে বেরোবি, রংপুরের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বাধা-বিপত্তিকে প্রতিহত করে সব ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের ধারা শুরু হয়, যার আলো এখন সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। খুঁড়িয়ে চলা বেরোবি, রংপুর এখন দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
বর্তমান উপাচার্যের নিয়োগের আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, অনিয়মের কারণে একে ‘পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়’ (প্রথম আলো, অক্টোবর ২০, ২০১০) আখ্যা দেয়া হত। এ সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর দায়ের করা বিভিন্ন মামলা আদালতে চলমান। কিন্তু প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার উপাচার্য হিসেবে বেরোরি, রংপুরে আসার পর দৃশ্যপট বদলে যায়। স্যারের নানামুখী বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ ও দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ফলে নিয়োগ, পদোন্নতিসহ সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান নীতির দরুণ প্রকৃত যোগ্য ও মেধাবীদের প্রবেশ নিশ্চিত হয়েছে, যা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
একাডেমিক, প্রশাসনিক ও গবেষণা কাজে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যে অনন্য চিন্তা-মননশীলতার ধারক-বাহক মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য দেশি-বিদেশি পাঠক্রমের সমন্বয়ে গঠিত ‘বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ’ প্রদানের ব্যবস্থা করেন, যা বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম। প্রথমে পাইলটিং হিসেবে শিক্ষকদের জন্য এবং পরে সকলের জন্য তা প্রণয়ন করা হয়। এ প্রশিক্ষণে দেশি-বিদেশি শিক্ষক, খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের তত্ত্বীয়, ব্যবহারিক ও অনুশীলনমূলক জ্ঞান প্রদান করা হয়, যা যথাযথ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। এ প্রশিক্ষণে বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের ফলে সংশ্লিষ্টরা নিজের কাজ ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সক্রিয় হয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে, যা বেরোবি, রংপুরের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দূর ও সকল সংকট-বিশৃঙ্খলা হ্রাসে বর্তমান উপাচার্য স্যারের নানামুখী বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এরূপ কাজে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। প্রথাগত নিয়ম-প্রক্রিয়া ভেঙে স্যার প্রশাসনিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও ডিজিটালাইজেশন করেছেন। ই-ফাইলিং, ই-টেন্ডারিং ইত্যাদির দরুণ প্রশাসনিক কাজে লাল ফিতা, দুর্নীতির দৌরাত্ম পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সংশ্লিষ্টদের বেতন-ভাতা ও পারিতোষিক প্রদানে অনিয়মের প্রথাগত স্থবিরতা দূর হয়েছে। সব ধরণের ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তির পদ্ধতি গ্রহনের ফলে ফাইল জট ও কার্যক্রমের জটিলতা-সময় ও শ্রমের অপচয়-অপব্যবহার বন্ধ হয়েছে। একইসাথে দুর্নীতিগ্রস্থদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অকারণে ক্লাস-পরীক্ষা-ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় সেশন জট, প্রশাসনের সাথে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতের অমিলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার অনেক ঘটনা আগে ঘটেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্থ করেছে। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এসব সমস্যার স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান হয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিতকরণে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অংশগ্রহন নিশ্চিতকরণ এবং সকলের যৌক্তিক স্বার্থ সংরক্ষণে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষ ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই ও সিসি ক্যামেরা এবং অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যার কারণে সেশনজট ও আন্দোলন-অবরোধের পুনরাবৃত্তি ঘটে নাই, যা বেরোবি, রংপুরের ইতিহাসে একটি বড় সফলতা। করোনা সংকট কালেও উপাচার্য স্যারের প্রচেষ্টায় শিক্ষকদের পদোন্নতি, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বান্ধব উপাচার্য হিসেবে তিনি সকলের মনে স্বমহিমায় উজ্জ্বল।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারক হিসেবে একাডেমিক পড়াশোনা ও গবেষণা অনন্য ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানামুখী সংকট ও সীমাবদ্ধতার দরুণ বেরোবি, রংপুর এ ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে ছিল। উপাচার্য হিসেবে প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার যোগদানের পর থেকে এ ক্ষেত্রে কার্যকর পরিবর্তন আসে। উপাচার্য স্যারের নিরলস পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে এখানে একাডেমিক পড়াশোনা ও গবেষণা প্রক্রিয়ায় ব্যাপক গতি সঞ্চারিত হয়। বর্তমানে বেরোবি, রংপুর থেকে প্রতি বছরে ৫০টির অধিক আর্ন্তজাতিক মান সম্পন্ন গবেষণা জার্নাল প্রকাশিত হয়। এজন্য ২০১৯ সালে গবেষণা ক্ষেত্রে বেরোবি, রংপুর দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। প্রাযুক্তিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ক্যাম্পাসে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-এর কার্যক্রম শুরু করার ফলে উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণায় এক নতুন যুগের উন্মোচন হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের ফলে গবেষণা জ্ঞান অর্জন-বিচ্ছুরণ প্রক্রিয়ায় নবতর পদচারণা উন্মুক্ত হয়েছে, যা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জনে সহায়তা করছে।
নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দীর্ঘ দিন ধরে বেরোবি, রংপুরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রক্রিয়া স্থবির ছিল। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার এসব স্থবিরতা দূর করে অবকাঠামোগত উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সকল ষড়যন্ত্র ও সমালোচনাকে প্রতিহত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য শেখ হাসিনা হল নির্মাণ, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণ, পরিবহণ যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, আনসার ক্যাম্প স্থাপন, একাডেমিক ভবন সমুহের সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু করেন। আগামীতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ, একাডেমিক ভবনের বর্ধিতকরণ, প্রধান ফটক নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে উপাচার্য স্যার এগিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার একজন সংস্কৃতি ও খেলাধুলা মনস্ক ব্যক্তি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রমিলা ফুটবল ও প্রমিলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, আন্ত:বিভাগ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, বিএনসিসি কন্টিনজেন্ট গঠন, ফেন্সিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা এবং উইমেন পিস ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেন। এসব ক্লাবের সদস্যরা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিয়ে সফলতা অর্জন করছে। তিনি সুষ্ঠু বিনোদন চর্চার স্বার্থে ক্যাম্পাস রেডিও চালু এবং কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চালু ও আধুনিকীকরণ করেন। উপাচার্য স্যারের অব্যাহত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার ফলে শারীরিক শিক্ষা বিভাগ নতুনভাবে পথচলা শুরু করে। আর স্যারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও খেলাধুলার জন্য ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে। ফলে বেরোবি, রংপুরে এক নব যুগের যাত্রা শুরু হয়। যা সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিনোদন অর্জনের পথকে প্রসারিত করেছে।
পরিশেষে সময়ের সেরা ব্যক্তিত্ব, সদা জাগ্রত অসীম পরিশ্রমী ও ন্যায়-নীতির পথিকৃত বেরোবি, রংপুর উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও কল্যাণকর জীবন কামনা করি। স্যারের হাত ধরেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাবে ইনশাআল্লাহ।
– মো: রহমতুল্লাহ্
প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
Leave a Reply