আসাদুজ্জামান ফারুক।।
ভৈরবের বেশ কয়েকটি গ্রামে এবং শহরে ইদানিং সাংবাদিক হওয়ার প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে, আন্ডারগ্রাউন কিছু পত্রিকা ( যেসব পত্রিকা পাঠক দেখেনা, পড়েনা) থেকে আইডি কার্ড এনে কোমরে ঝুলিয়ে কতিপয় কিছু নামধারি সাংবাদিক শহরে ঘূরঘূর করছে। উপজেলা এলাকা, থানা, রেলস্টেশন, হাসপাতালে প্রায়ই এদেরকে দেখা যায়। কার্ডধারী কথিত এসব সাংবাদিকদের অনেকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাইমারী পাশ বা সেভেন / এইট পাশ। অখ্যাত পত্রিকা কর্তৃপক্ষ আইডি কার্ড দিতে গিয়ে তাদের একাডেমি যোগ্যতা যাচাই করেনা। এদের মধ্য কারো কারো পত্রিকার সার্কুলেশন নগন্য হলেও তারা কার্ড দিয়ে সাংবাদিক তৈরি করে ভাল আয়ও করে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কথিত নামধারী এসব সাংবাদিক কেউ ছিল কাঠমিস্ত্রি, কেউ অটোচালক, কেউ মাঝি, কেউ পিঠা বিক্রেতা, কেউবা অন্যকিছু। আবার অনেকে রাজনীতি দলের ছোট বড় পদধারী হয়েও কথিত সাংবাদিক হয়ে গেছে। একসঙ্গে দুটি ক্ষমতা ব্যবহার করতে চান তারা। রাজনীতি যদি করেন তবে সাংবাদিকতায় আসবেন কেন? আমরাতো সাংবাদিক হয়ে রাজনীতিতে আসিনা। একটি দলকে বা নেতাকে সমর্থন করতে পারি কিন্ত দলের পদধারী কখনও হয়না আমি। হওয়ার ইচ্ছাও নেই। বাহ! কি মজা? কোন যোগ্যতা ছাড়া বা শিক্ষিত না হয়েও সাংবাদিক হওয়া যায়। মিডিয়া থেকে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারলেই আমি একজন সাংবাদিক হয়ে গেলাম! কত সহজ?? ভৈরবের একটি বিশেষ গ্রামে প্রায় সময় মারামারি, সংঘর্ষ, দলাদলিতে আহত / নিহতের ঘটনা ঘটে। এতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেয়। এসব মামলায় ৫০/১০০/১৫০ পর্যন্ত আসামী হয়। সাংবাদিক হলে মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যায় বা পুলিশ সালাম দেয়, প্রশাসন সন্মান করে এমন মনোভাব নিয়েই বিশেষ কয়েকটি গ্রামে সাংবাদিক হওয়ার হিড়িক পড়েছে লক্ষ্য করা যায়। মাদক সেবনকারী, টাওটার, বাটপাররাও আজকাল কথিত সাংবাদিকের পরিচয় দিচ্ছে। এদের অনেকে কাঁদে ব্যাগ, হাতে বড় ক্যামেরা, কোমড়ে আইডি কার্ড, মটরসাইকেলে প্রেস বা সাংবাদিক লিখে শহরে দাবরিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্ত অনেকেই নিউজের বেলায় ঠন ঠন। ফেসবুক থেকে কপিপেস্ট করে এদের অনেকেই নিউজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকে নিজের মিডিয়াই খবর প্রকাশ না করে প্রতিদিনের একাধিক ঘটনা ফেসবুকে স্টেটাস দিচ্ছে। এসব স্টেটাসে কিছু কিছু বন্ধু লাইক কমেন্ট করে কথিত সাংবাদিকদেরকে উৎসাহ দিচ্ছে। এরা কারো কারো সাথে বা সন্মানী ব্যক্তিদের সাথে সেলফি বা ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে নিজকে বড় সাংবাদিক জাহির করছে। এখন আবার অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিক। দেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত অনলাইন সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইন সাংবাদিকের পরিচয়ও কেউ কেউ দিয়ে থাকে। কথিত এসব সাংবাদিকের নিউজগুলিতে থাকে গল্প আর কাহিনী। পড়লে হাসি পায়। এসব কথিত সাংবাদিকদের রুখতে হবে। ভৈরবের সিনিয়র সাংবাদিকদেরকে অনুরোধ করব, আসুন আমরা ঐক্যমতের মাধ্যমে ঐক্য গড়ে তুলি। পুলিশ বিভাগ ও প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব ভূয়া সাংবাদিকদের থেকে আপনারা দূরে থাকুন।প্রমান পেলে ভূয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা নিন। এদের সাথে ছবি তুলে আপনাদের সন্মানটুকু নষ্ট করবেন না। আমরাও চাই শিক্ষিতরা এই পেশায় আসুক, নতুন সাংবাদিক সৃষ্টি হোক। ভালমানের, ভাল বংশের শিক্ষিতরা সাংবাদিক পেশায় আসলে সমাজের উপকার হবে। কিন্ত কিছু হুলুদ সাংবাদিকরা সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের পেশাটাকে অসন্মান করে বদনামের পাল্লা ভারী করে ফেলছে। এই অবস্হা থেকে উত্তরণ হতে হবে। কাউকে না কাউকে হাল ধরে এসব রুখতে হবে। এখন সময় এসেছে। আসুন আমরা ঐক্য গড়ে তুলি। ভৈরবের বদনাম হলে আমরা কখনও এর দায় এড়াতে পারবনা। আমি জানি আমার লেখাটি পড়ে অনেকেই আমার সমালোচনা করবে, মনে মনে গালি দিতে পারে। তারপরও বলতে বাধ্য হলাম। ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখক ঃ
আসাদুজ্জামান ফারুক
সিনিয়র সহ-সভাপতি, ভৈরব প্রেসক্লাব।
সভাপতি, ভৈরব টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।।
Leave a Reply