”
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়। উত্তরের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ক্যাম্পাস তখন আন্দোলন ও সংগ্রামে উত্তাল। মঙ্গাপিড়ীত উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত তার হাল ধরতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের গ্রেড-১ প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারকে। ‘সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স’ খ্যাত বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সম্মান জনক কমিশন্ড অফিসার মেজর পদ পাওয়া প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার শিক্ষকতা ছাড়াও দেশের উন্নয়নে নানান কার্যক্রমে যুক্ত। তাঁর হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ)। সংগঠনটির চেয়ারম্যানও তিনি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। এছাড়াও সাংবাদিকতাও করেছেন একসময়, জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি এশিয়ান এইজের’ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। এমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন মানুষ দায়িত্ব নিলেন নানান সমস্যায় জর্জরিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। দেখতে দেখতে সময় গড়িয়েছে অনেকটাই। নানান আলোচনা-সমালোচনার পরও প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার বিশ্ববিদ্যালয়টির যে উন্নয়ন করেছেন তা অনস্বীকার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ তার শিক্ষার্থীরা। বর্তমান উপাচার্য মহোদয়ের সেটা অজানা নয়। তিনি উত্তাল ক্যাম্পাসের দায়িত্ব নিয়েই সঙ্কট সমাধান করেছেন অনেকটা নিভৃতেই। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষক। বর্তমানে চালু থাকা ২১টি বিভাগের মধ্যে অন্যতম পরিসংখ্যান বিভাগে শিক্ষকতা করছি। বিজ্ঞান অনুষদের এই বিভাগটি সম্পর্কে ধারণা দিলে উপাচার্য মহোদয়ের কার্যক্রম অনেকটা চোখে পড়বে। তার আগে বলে রাখি, ক্যাম্পাসে যোগ দিয়েই বেরোবি পরিবারের প্রধান হিসেবে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘আপনাদের যা কিছু সমস্যা আমাকে জানান। আমি সমাধান করবো। ’তা যে কথার কথা ছিল না, সেটার প্রমাণ মিলেছে কিছুদিনের মধ্যে যখন সবার কাছে সমস্যাগুলো শুনে একে একে সমাধান করে চলেছেন তিনি।
ব্যতিক্রম নয় পরিসংখ্যান বিভাগটিও। ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু বিভাগটির। শুরুর দিকে সেশনজট, শিক্ষকসংকট, ল্যাবসংকট, ইন্টারনেট সুবিধার সংকট, বিভাগের শিক্ষকদের লজিস্টিক সাপোর্ট সংকটসহ নানারকম সংকটে জর্জরিত ছিল বিভাগটি। মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার এর উদ্যোগেই পরিসংখ্যান বিভাগে বসেছে অত্যাধুনিক মানের কম্পিউটার ল্যাব। ল্যাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন – ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর কেবলমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞানই নয়, থাকতে হবে ব্যবহারিক জ্ঞানও। তবেই একজন শিক্ষার্থী উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় তার গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর একাডেমিক ভাবে ভালো ফলাফলের পাশাপাশি অন্যকে শ্রদ্ধা ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনটাও যেন তার সিলেবাস থেকে বাদ না যায় এ ব্যাপারে শুরুতেই সতর্ক থাকতে হবে। ’শিক্ষার্থীদের প্রতি উপাচার্য স্যারের এই মূল্যবান বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, মাননীয় উপাচার্য স্যার কতটা শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্বশীল এবং শিক্ষার্থীবান্ধব।
প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও অনেক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন মানুষ। তাঁর কাজের পরিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপৃত রয়েছে। এমন একজন ব্যস্ত মানুষ, তারপরও শিক্ষা সফরে গিয়ে তিনি তাঁর প্রিয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করেন অতি সাধারণের মতোই। শিক্ষার্থীরাও তাঁর সাহচার্য ও অনুপ্রেরণায় মুগ্ধ। এছাড়াও বিভাগের সভা, সেমিনার, খেলাধুলা, কালচারাল প্রোগ্রাম, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম চালু সহ সবক্ষেত্রেই তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে কিংবা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে যুক্ত থেকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন সবসময়।
সেশন জট নিরসনে পরিসংখ্যান বিভাগসহ সকল বিভাগে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং কোর্স ও কর্মচারীদের জন্য ইন্ডাকশন ট্রেইনিং কোর্স এর ব্যবস্থা, ওয়াই-ফাই সংযোগ, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, শিক্ষকদের লজিস্টিক সাপোর্টসহ নানা রকম উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। পরিসংখ্যান বিভাগে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারের সুদৃষ্টির কারণে এবং বিভাগীয় প্রধানসহ সকল সহকর্মীদের সহযোগিতায় আজ বিভাগটি সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগেও তেমন সেশনজট নেই বললেই চলে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আনসার সদস্যদের জন্য স্থায়ী আবাসিক সুবিধা আনসার ক্যাম্প উদ্বোধন এবং একাডেমিক ভবনসমুহের সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। তাছাড়া এই করোনাকালীন সময়ে সকল কাজই যেখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে সেখানে শিক্ষকদের পদোন্নতিও বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। সম্প্রতি আমার দুইজন সহকর্মী এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ADB) ও কমনওয়েলথ কর্তৃক ফুল স্কলারশিপ এর জন্য মনোনয়ন পান। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্যার সাথে সাথেই বৈশ্বিক এ মহামারীর সময় নিজের ঝুঁকি নিয়ে সকল ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পিএনডি এবং অধ্যয়নছুটি
কমিটির মিটিং ডেকে তাদের বিদেশের মাটিতে উচ্চ শিক্ষার পথ তরান্বিত করেন। এ থেকেই মাননীয় উপাচার্যের শিক্ষার প্রতি অনুরাগ পরিমাপ করা যায়। স্যারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছেন। তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বোধনী সমাবর্তন, নতুন নতুন গাড়ি ক্রয়, গাড়ির রুট বৃদ্ধি, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুকরণ, নিয়মিত সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন, ডিজিটাল ক্লাসরুম চালুকরণ, গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কেন্দ্রীয় ভাবে বেরোবি, রংপুর রেকর্ড সংখ্যক জার্নাল প্রকাশ, সকল দপ্তর অনলাইনের আওতাভুক্ত করা, ই-ফাইলিং সিস্টেম চালুকরণ, বৃক্ষরোপণ ও ক্যাম্পাস রেডিও, ক্যাফেটেরিয়া, অবকাঠামোগত উন্নয়ন (শেখ হাসিনা হল ও ডক্টর ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং ইন্সটিটিউট ভবন নির্মাণের কাজ চলমান), ফেন্সিংক্লাব, নারীদের আত্মরক্ষার্থে ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা, বিএনসিসি এবং স্কাউট এর অফিস স্থাপন, ব্যাংকের নতুন শাখা স্থাপনের কার্যক্রম, যানবাহনের গ্যারেজ স্থাপন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসস্থল নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার ইত্যাদি নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন ও পরিকল্পনা করেছেন।
মাত্র চার বছরে সমস্যায় জর্জরিত একটি প্রতিষ্ঠানের সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তিনি একজন সৎ, সাহসী, অকুতোভয় ও প্রত্যয়ী একজন মানুষ। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও তিনি তাঁর যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে। বেরোবি, রংপুরের যা কিছু উন্নয়ন তা উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারের সুদূরপ্রসারী চিন্তা-চেতনার ফল। আর যা কিছু সম্ভব হয়নি তা আমাদের অনেকের মানসিক দৈন্যতা, হীনমন্যতার ফলে। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আমাদের উচিত ভুল-ত্রুটি ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে উপাচার্য মহোদয়কে সহযোগিতার মাধ্যমে বেরোবি, রংপুরকে গড়ে তুলি স্বপ্নের একটি ক্যাম্পাসে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জ্ঞান-গবেষণায় বেরোবি পরিচিতি পাক বিশ্ব দরবারে।
মো. বিপুল হোসেন (বিপু)
সহকারী অধ্যাপক,
পরিসংখ্যান বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
Leave a Reply