প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও এর যোগদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক। একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে মুক্ত করা বর্তমান উপাচার্যের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু সুখের বিষয় হচ্ছে বর্তমান উপাচার্য উপর্যুক্ত চ্যালেঞ্জগুলোকে সফলভাবে মোকাবেলা করে বিভিন্ন নতুন এবং শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি স্বচ্ছ ও ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হয়েছেন। এর মধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়ে আজ বলতে চাই।
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর এবং বহিরাঙ্গন দপ্তর চালুকরণ
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক পরামর্শ প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় শিক্ষকদের একটি সঠিক পরামর্শ একজন শিক্ষার্থীকে সমূহ বিপদ থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। এ কাজটিই করে থাকে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১৭ সালে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর এবং বহিরাঙ্গন দপ্তর চালু করেন।
শিক্ষা ও গবেষণা
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হচ্ছে জ্ঞান উৎপাদন ও জ্ঞান বিতরণ করা। প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও বিষয়টি সম্পর্কে শুরু থেকেই সম্যক সচেতন ও আন্তরিক ছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইনস্টিটিউট, অনুষদ, বিভাগ ও সেন্টার বিভিন্ন শৃঙ্খলা থেকে নিয়মিত জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কেবল লোকপ্রশাসন শৃঙ্খলা থেকেই তাঁর সম্পাদনায় এ পর্যন্ত ৭টি জার্নাল প্রকাশ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি নব উদ্যোমে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট চালু করেন। তিনিই প্রথম এই ইনস্টিটিউটের বিধি-প্রবিধি তৈরি করেন , পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেন, এমফিল এবং পিএইচডি-এর সিলেবাস প্রণয়ন করেন, এমফিল ও পিএইচডিতে ভর্তির নীতিমালা প্রণয়ন করে পর্যাপ্ত সুপারভাইজার এবং গবেষণা কর্মকর্তা নিয়োগ দেন । বর্তমানে ইনস্টিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশবরেণ্য বিভিন্ন ব্যক্তিরা গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট বিগত ৩ বছরে প্রায় ১৫০ এর অধিক দেশী এবং আন্তর্জাতিক সেমিনার সফলভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য ২০০৮ সালে গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তর চালু করা হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে ২০০৮ থেকে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি বন্ধ ছিল। বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর এ দপ্তরটি চালু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক গবেষণা কার্যক্রমে গতির সঞ্চার করেন।
বর্তমান বিশ্বে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কে অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে হেকেপ প্রজেক্টের মাধ্যমে এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে যাচ্ছে । বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর নবনিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য ছয়মাস মেয়াদী বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছেন।
শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল ও সহজ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই সংযোগের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে । কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মাত্র ছয় মাসের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি, যার ফলে শিক্ষার্থীরা বিপুল ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও দায়িত্ব গ্রহণের পর অত্যন্ত দ্রুততার সাথে প্রশাসনিক জটিলতা দূর করে ক্যাম্পাসের সকল জায়গায় উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ওয়াইফাই সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া প্রতিটি বিভাগের একটি শ্রেণীকক্ষে উচ্চমান সম্পন্ন প্রজেক্টর ও ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরি করা হয়েছে। সাইবার সেন্টারের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ক্যাম্পাস রেডিও চালু করা হয়েছে। ক্যাম্পাস টিভি চালুর প্রক্রিয়াধীন আছে। নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত করার জন্য উইমেন পিস ক্যাফে চালু করা হয়েছে। সহশিক্ষা কার্যক্রমকে বিকশিত করার জন্য প্রায় প্রতিটি বিভাগে বিভিন্ন ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ল্যাবগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতির সঞ্চার
বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও এমন এক কঠিন সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাবে অনেকাংশে স্থবির ছিল। প্রশাসনিক কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা ছিল। বর্তমান উপাচার্য এ সমস্যাটি চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ে প্রশাসনে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করেন এবং তাদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। পরীক্ষানিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কার্যক্রমে গতিশীলতা সৃষ্টির জন্য দ্বিগুন জনবল নিয়োগ করেন। টেন্ডার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার জন্য ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালু করেন।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও এমন অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন যার মাধ্যমে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি স্বচ্ছ ও ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে।
মুজাহিদুল ইসলাম
প্রভাষক,
লোক প্রশাসন বিভাগ;
সভাপতি,
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ক্লাব;
সদস্য,
নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
Leave a Reply